ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস আজ
ভাঙ্গতে হবে স্বৈরাচারের দুঃশাসনের শৃঙ্খল : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩২ পিএম, ২৪ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২২ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, ২৪ জানুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা ও স্বাধীকারের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালের এ দিনে তদানীন্তন পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গণআন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে তা ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল। পতন নিশ্চিত হয়েছিলো সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। আর এরই ধারাবাহিকতায় প্রশস্ত হয়েছিলো আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ।
গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই ছিল স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন, বহুদলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম, বহুমত এবং চিন্তার চর্চা ও মানুষের মৌলিক মানবাধিকারসহ নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমাদের জাতীয় জীবনে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। দিবসটি আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধিকার অর্জনের চেতনাকে শাণিত করে এবং সকল অন্যায়-অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আজও অনুপ্রাণিত করে।
বর্তমানে আবারও একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসনের চরম বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাক, ব্যক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতা এখন নিরুদ্দেশ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একতরফা মিডনাইট নির্বাচনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কায়দায় এক অভিনব ভোট করে ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করে নেয়া হয়েছে। সুতরাং আজকের এ মহান দিনে আমি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই।
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৬৯ সালের এ দিনে ছাত্র-জনতার দৃঢ় ঐক্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত করেছিল। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল পশ্চিমা শাসন-শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে রাজপথে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দীর্ঘদিন ধরে এদেশের জনগণের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন ‘৬৯ এর এ দিনে গণঅভ্যুথানে পরিণতি লাভ করে।
সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের এ সংগ্রাম ছিল বিশ্বের সকল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা। ‘৬৯-এ স্বৈরশাসনের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-স্বাধীকারের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিলো। কিন্তু স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রায় অর্ধশতাব্দি অতিক্রান্ত হলেও দেশীয় কর্তৃত্ববাদী বর্তমান স্বৈরাচার ঔপনিবেশিক প্রভুদের মতো দুঃশাসন চালিয়ে জনগণকে ক্ষতবিক্ষত করছে। বর্তমানে জনগণের নেই কোনো নাগরিক স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা ও নির্ভয়ে কথা বলার অধিকার। ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে গৃহে ফিরে যাবার নিশ্চয়তাটুকুও গতকাল নেই। দেশ এখন ঘোর দুর্দিন অতিক্রম করছে। আবারো দেশে ‘৬৯-এর ন্যায় গণঅভ্যুথানের পরিস্থিতি বিরাজমান।
আমাদেরকে আবারো অধিকারহারা বঞ্চিত জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে বেরিয়ে আসতে হবে। ভাঙ্গতে হবে স্বৈরাচারের দুঃশাসনের শৃঙ্খল। দেশের গণতন্ত্র ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় গণঅভ্যূত্থান দিবস আমাদের প্রেরণার উৎস।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ঊনসত্তরের গণআন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।