বিএনপি থেকে তৈমূর আলম ও এটিএম কামালকে বহিস্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক তৈমূর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারী) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু এই চিঠি গণমাধ্যমের কাছে এলেও তৈমূর আলম ও এটিএম কামাল পাননি বলে মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
আড়াই লাইনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল-বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিস্কার করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এটিএম কামাল সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। নির্বাচনের মাঠে তৈমূরের পক্ষে এটিএম কামাল জোরালো ভূমিকা রাখেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তৈমূরের পাশেই ছিলেন।
এদিকে এটিএম কামালকে বহিস্কারের খবরে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে এটিএম কামালের ক্লীন ইমেজ রয়েছে।
তবে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল দলটির। সেই সিদ্ধান্ত না মানায় এটিএম কামালের ভাগ্যে বহিস্কারাদেশের খড়গ নেমে এলো বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। গুঞ্জন রয়েছে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে দল থেকে বহিস্কার করা হতে পারে। নির্বাচন চলাকালীন সময়েই তৈমূর আলম খন্দকারকে প্রথমে দলের জেলা কমিটির আহবায়ক পদ থেকে এবং পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
দলটির স্থানীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তৈমূর আলম নির্বাচনে পরাজিত হননি, তাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। তৈমূর নির্বাচন করাতেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ইভিএম-একটা চুরির বাক্স মাত্র। এখন এটাকে পুঁজি করে বিএনপি আগামীতে এর বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। তাছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তৈমূরকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়ই নির্বাচন না করতে বলতে পারতেন। তিনি মনোনয়ন কিনিছেন, জমা দিয়েছেন, বাছাইয়ের উর্ত্তীণ হয়েছেন, প্রতীক নিয়েছেন। এত কিছুর মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা চুপ ছিলেন। কিন্তু প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় নামার পর তারা তৈমূর আলমের সব গুলো পদ থেকে একে একে তাকে প্রত্যাহার করে নিলেন- কিন্তু কেন?।
দলের বেশ ক’জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলে তৈমূর আলম ও এটিএম কামালের মতো নেতাদের ত্যাগ অনেক। এ ধরণের ক্লীন ইমেজধারী নেতা সহসাই তৈরী হয় না।
তারা আরও বলেন, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে নির্বাচনের মাঠে না নামায় সরকারী দল আওয়ামী লীগ তাদের ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়েছে। হয়তো আরও কমিটি বিলুপ্ত করবে। তারা সরকারি দল। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা যে খেলা শুরু করেছে, তাতে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে দলটি নারায়ণগঞ্জে নেতাকর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দল থেকে বহিস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে এটিএম কামাল বলেন, আমি এ খবরে বিস্মিত যে আমাকে উদ্দেশ্য করে নেওয়া দলের সাংগঠনিক চিঠি আমার হাতে পৌছার আগেই কিভাবে সংবাদ মাধ্যমে গেলো। বহিস্কারের এ খবর আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকে পেয়েছি। জেলা বিএনপির রুহুল আমিন নামে এক নেতা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সাংবাদিকদের ম্যাসেঞ্জারে এই চিঠি পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কোন সিদ্ধান্ত দল নিতেই পারে। সেটি আমি মাথা পেতে নেবো। কিন্তু আমার চিঠি আমি হাতে পাওয়ার আগেই কিভাবে সাংবাদিকদের কাছে গেলো সে ঘটনায় আমি বিস্মিত। কামাল বলেন, দল আমাকে বহিস্কার করলেও আমি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবেই আমৃত্যু থেকে যাবো। আমার অন্তরে আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে লালন করি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমি বিশ্বসী।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য রুহুল আমি বলেন, আমি একটি নিউজ পোর্টালে প্রথমে চিঠিটি দেখতে পাই। সেখান থেকে নিয়ে আমি কিছু সাংবাদিককে দিয়েছি-এটা সত্য।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এ ধরণের কোন চিঠি পাইনি। যদি এটি হয়ে থাকে তাহলে বলবো, নারায়ণগঞ্জে বড় দুটি দলেই মহামারী দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ কমিটি ভাঙ্গছে, কেন তাদের দলের প্রার্থীর পক্ষে নেতা কর্মীরা মাঠে নামেনি। আর বিএনপি বহিস্কার শুরু করেছে কেন নির্বাচনের মাঠে নামলো। বড় দুটি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের উচিত আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। এর বাইরে কিছু বলার নেই। আমি দলের কর্মী হয়েই থাকতে চাই।