‘৮০-এর দশকে জিয়া অর্থনীতির প্রবর্তন ঘটে
আলী মামুদ, দিনকাল
প্রকাশ: ১০:২০ পিএম, ১৬ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫১ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশে কথিত সমাজতান্ত্রিক আবহের সৃষ্টি হয়। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আমলের পরিত্যক্ত বা ফেলে যাওয়া বড় বড় শিল্প কারখানাগুলোর দায় দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকার। ৪০ হাজার শ্রমিক-কমচারীর বিশ্বখ্যাত পাট শিল্প আমদজী পাটকলসহ অনেক শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করা হয়। মুসলিম কটন মিলসহ সাবেক বস্ত্র শিল্পও জাতীয়করণ করা হয়। প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিসহ অনেক ভারি শিল্পও জাতীয়করণের আওতায় আসে। এসব যথাক্রমে পাট কল, বস্ত্র কল ও ইস্পাত প্রকৌশল সংস্থা (করপোরেশন) হিসেবে প্রথম দিকে লাভজনকভাবে চলছিল। পরে এগুলো অলাভজনক শিল্পের মিছিলে যোগ দিয়েছে। এখন ব্যাংকের ঋণে চলছে এসব কল কারখানার বেতন ভাতা। তবে এসব করপোরেশনের অনেক শিল্প কারখানাই বেসরকারি খাতে ফিরে গেছে। বেসরকারিকরণের সুফল এসেছে। মুক্ত অর্থনীতির যুগে, যার প্রবর্তন ঘটেছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতেই। যাকে বলা যায় জিয়া অর্থনীতি।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-উত্তরকালে ঢালাও জাতীয়করণের যুগে ‘‘ফেলে যাওয়া’’ শিল্প কারখানার সাথে স্থানীয় বাংলাদেশি মালিকদের মালিকানাধীন শিল্প কারখানাও কথিত জাতীয়করণ করা হয়। পাট ও বস্ত্র শিল্পের মধ্যে কিছু কিছু কারখানার স্থানীয় মালিকরা ছিলেন। বস্তুত, তাদের কাছে তাদের শিল্প কারখানা ফিরিয়ে দেয়া শুরু হয় প্রথম দিকেই। যেমন কাসেম টেক্সটাইল ফিরিয়ে দেয়া হয় স্থানীয় মালিক কাসেম গ্রুপের কাছে। ঐ গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন মাঈদুল ইসলাম মুকুল। তার সঙ্গে ছিলেন তাদের মেজো ভাই মইনুল ইসলাম। তারা দুজনই মারা গেছেন। তাদের ছোটভাই ভাসভীরুল ইসলাম এখন কাসেম ড্রাইসেল শিল্পটি চালাচ্ছেন। ডব্লিউ রহমান পাটকল চালিয়ে গেছেন মরহুম লতিফুর রহমান। এ ধরনের আরো কিছু স্থানীয় বাঙালি মালিক ফিরে পাওয়া কলকারখানা চালিয়েছেন। অনেকেই সফলও হয়েছেন।
ঢালাও জাতীয়করণের সুফল নেই : ঢালাও জাতীয়করণের সুফল পাওয়া যায়নি। জাতীয়করণ মানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইচ্ছামাফিক কাজকর্ম। যে আদমজী পাটকলে ৪০ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছিল তাতে স্বাধীনতা-উত্তরকালে হাজার হাজার ভূতুড়ে শ্রমিকের (ঘোস্ট লেবার) অভ্যুদয় ঘটেছিল। অস্তিত্বহীন শ্রমিকদের নামে মাসে মাসে বেতন ভাতা দেয়া হতো। পরিণতিতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আদমজী পাটকল বিরাষ্ট্রীকরণ হয়েছে এখন সেখানে গড়ে উঠেছে ইপিজেড (রফতানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা)
সফল কাহিনী ইপজেড : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ইপিজেডের অভ্যুদয়। সরকারি জায়গায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়, তাতে স্থাপিত দেশি-বিদেশি কারখানায় যে পণ্য উৎপাদন হয় তার সবটাই বিদেশে রফতানি হয়। প্রথমে চট্টগ্রামে স্থাপিত হয় এই ইপিজেড। পরে সাভারে দ্বিতীয় ইপিজেড হয়। বর্তমানে এই ইপিজেড শিল্প কারখানা উত্তরাঞ্চলেও স্থাপিত হয়েছে।
তৈরি পোশাক রফতানিতে বিপ্লব : ইপিজেডের পরে এসেছে তৈরি পোশাক রফতানির যুগ। এটিও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে। এই শিল্পে বর্তমানে অর্ধকোটি শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও বন্ড সুবিধার কারণে এ শিল্পের এই ব্যাপক অগ্রগতি। এই শিল্পে উদ্যোক্তা হিসেবে মেধাবী ও কৃতি মানুষের আগমন ঘটেছে।
কিন্তু এই তৈরি পোশাক শিল্পে দেখা যাচ্ছে অশনি সংকেত। ‘৮০-এর দশকে দেয়া সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। গার্মেন্টস নামে আনা বস্ত্র, সুতাসহ অন্যান্য এক্সেসরিজ বাজারে প্রকাশ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। প্রশাসনের মদদপ্রাপ্ত লোকজন এইসব সরকারি সুবিধার অপব্যবহার করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করে বেগম পাড়া গড়েছেন।
সাহসী উচ্চারণ : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য সাবেক একজন চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ বিষয়ে বিশদ লিখেছেন। এ পর্যন্ত দুটি দৈনিকে তার নিবন্ধটি ছাপা হয়েছে। তিনি লিখেছেন : প্রতিবছর বন্ড সুবিধা দিয়ে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা শুল্ককর অব্যাহতি দিয়ে থাকে। এক শ্রেণির উদ্যোক্তা একদিকে এসব সুবিধা গ্রহণ করে সরকারের রাজস্ব কম দিচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। রফতানির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় ফ্যাক্টরি বন্ধ, কোনো উৎপাদন নেই, অথচ বন্ধ কারখানার নামে কাঁচামাল আমদানি করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব অবৈধ সুতা সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও বসুরহাট প্রভৃতি স্থানে বিক্রি হয়। দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তার এই নিবন্ধ নিয়ে দৈনিক দিনকালে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্যসহ গত ১০ জানুয়ারি (২২) একটি বিশেষ রিপোর্ট ছাপা হয়েছে।
ব্যবস্থা নেয়া হবে : এসব বিষয়ে সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বর্তমানে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, লেখাটি পড়েছি। তবে যতটা বলা হয়েছে, বাস্তবে ততটা নয়। কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেমন ১ কেজি সুতা আনার কথা, বাস্তবে আনা হচ্ছে ৩ কেজি। আবার বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ’র মাধ্যমে যে সুবিধা দেয়া হয় তাতেও শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।