১০২ বছর বয়সী বিচারপতি টি এইচ খান আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৯ পিএম, ১৬ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম আইনজীবী ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি টি এইচ খান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আজ রবিবার সন্ধ্যা ৫টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আগামীকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে প্রবীণ এই আইনজ্ঞের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
১০২ বছরে পা দেয়া খ্যাতিম্যান এই প্রবীণ আইনজীবীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর রোববার ভোরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার ছেলে সিনিয়র সাংবাদিক ও সিনিয়র আইনজীবী আফজাল এইচ খান জানান, ‘বেলা ৫টায় আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
তিনি জানান, ‘গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোববার ভোরে তাকে রাজধানীর কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ নিউমনিয়ায় ভুগছিলেন।’
তিনি আরো জানান, এর আগে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে গত ৯ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে ৬ জানুয়ারি বাসায় আনা হয়।
গত ২১ অক্টোবর বিচারপতি টি এইচ খানের ১০২তম জন্মদিন জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
দেশবরেণ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি দেশের প্রবীণতম আইনজীবী।
বিচারপতি টি এইচ খানের প্রকৃত নাম মো: তাফাজ্জাল হোসেন খান। তিনি ১৯৬৮ সনে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে পুনরায় আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে সপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হন।
বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে জাতিয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।
১৯৯২ সনে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যার রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৫ সালে বিচারপতি টি এইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন মাস পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকার্য পরিচালনা করেন।
১৯৪০ সালে বিচারপতি টি এইচ খান ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন।
আইন পেশা ছাড়াও বিচারপতি টিএইচ খান পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।