সিদ্ধিরগঞ্জে নির্বাচিত হওয়ার আগেই সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিভিন্ন সেক্টর ভাগাভাগি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৫ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫২ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আগামীকাল রবিবার ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের দমনে আইনশৃংখলাবাহিনীর কোন তৎপরতাই দেখেনি এলাকাবাসী। ফলে নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েই গেছে। তবে অবাক করার বিষয় হলো ছয় নাম্বার ওয়ার্ডের সন্ত্রাসীরা নির্বাচনে বিজয়ী হলে কে কোন ব্যবসা এবং কে কোন এলাকা নিয়ন্ত্রন করবে তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ি ও এলাকাবাসীর মধ্যে। তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে, সিদ্ধিরগঞ্জে ঝূঁকিপূর্ণ কয়েকটি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্যতম ছয় নাম্বার ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন থানা যুবলীগ সভাপতি, নাসিকের প্যানেল মেয়র ও ছয় নাম্বার ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আলহাজ্ব মতিউর রহমান মতি (ঠেলাগাড়ি)। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ নেতা সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল (ঘুড়ি)। ছয় নাম্বার ওয়ার্ডের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৮ বছর বিদেশে পলাতক থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদ্রাসা ছাত্র সাগর হত্যা মামলার প্রধান আসামী গোলাম মোহাম্মদ খান ওরফে গুলু মেম্বার (৫৫) গোপনে দেশে ফিরে। পরে গোপনে ২৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আত্মসমর্থন করলে আদালত সরাসির তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এবং কারাভোগের পর ১৪ ডিসেম্বর গুলু মেম্বার জামিনে বেরিয়ে সরাসরি সোনামিয়া বাজার এলাকায় ঢুকে তার বিশাল ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। হঠাৎ তার আগমনে সাধারণ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সন্ত্রাসী গুলু মেম্বার তার বাহিনী নিয়ে হাত মেলায় সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের সাথে। এলাকায় বলাবলি আছে গুলুকে জামিন করানোর পেছনে অর্থ ব্যয় করেছে সিরাজুল ইসলাম মন্ডল। গুলু মেম্বার সিরাজুল ইসলামের পক্ষে মাঠে নামেন। এবং ভোটারদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ ভোটাররা।
এখানেই শেষ নয় , তাদের প্রার্থী সিরাজ মন্ডল বিজয়ী হলে তারা কে কোন এলাকা এবং কে কোন সেক্টর দখল করবে নিজেদের মধ্যে তা ভাগাভাগি করে নেয়। এলাকাবাসী জানায়, তারা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছে আদমজী ইপিজেড নিয়ন্ত্রনে নিবে সন্ত্রাসী গুলু মেম্বার, নতুন বাজারের ছোট ইসমাইল, সেলিম মজুমদার, আবু খান। ডিস ও ইন্টারনেট দখলে নিবে কিশোরগ্যাং লিডার শাকিল ও আবু খান। সোনা মিয়া বাজার বনিক সমিতি ও বাজার নিয়ন্ত্রনে নিবে গুলু মেম্বার ও সাইদুল। এসও তেল ডিপো নিয়ন্ত্রনে নিবে সিরাজ মন্ডল, তার ভাই মামুন মন্ডল ও স্বপন মন্ডল। ফারুক হোসেন বাক্কু মাদক ব্যবসা। এছাড়াও দ্বিতীয় সারির অন্য সন্ত্রাসীরা ছোট খাটো সেক্টর গুলো দখল করবে বলেও ঘোষণা েিদয়ছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, সোনামিয়া বাজারের খা বাড়ির পৈলান খানের ছেলে সন্ত্রাসী গুলু মেম্বার দুই দফায় দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় বিদেশে পলাতক ছিল। মুলত অর্থের বিনিময়ে প্রার্থীর পক্ষে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করার জন্য গুলু মেম্বার দেশে ফিরে। এবং এলাকায় এসে সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী সংগঠিত করে। এই বাহিনীতে মাদক সেবক, মাদক বিক্রেতা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, বখাটেসহ বিভিন্ন ধরনের লোক রয়েছে। তাছাড়া গুলু মেম্বার মাদ্রাসা ছাত্র সাগর হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে সন্ত্রাসী গুলুর বাহিনী ক্যাডাররা হচ্ছে, অর্ধশতাধিক ক্যাডার রয়েছে। এই ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সে এলাকায় যা ইচ্ছা তাই করার মিশনের নেমেছে। গুলুর সন্ত্রাসী বাহিনীর অগ্রভাগে রয়েছে, সেলিম মজুমদার, পিস্তল আবু খাঁ, মনির খাঁ, শ্যালক ইয়াবা মনির, কসাই বাবু, মোহাম্মদ আলী, শাওন, আমীর হোসেন কুট্টি, ইসমাইল হোসেন ওরফে ছোট ইসমাইল, ফারুক হোসেন বাক্কু ওরফে ইয়াবা বাক্কু, সালাউদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, কালাম, নিহাল, আজাদ, সোহেল, তুহিন, শাকিল-১, শাকিল-২, সম্রাট, বোছা আলমগীর। এই সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে উঠতি বয়সী (কিশোরগ্যাং) আরও শতাধিক সন্ত্রাসীরা। গুলু বাহিনীর অধিকাংশ সন্ত্রাসীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, এই সন্ত্রাসীদের দিয়েই গত কয়েকদিন ধরে গুলু মেম্বার ঘুড়ি মার্কার পক্ষে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জরুরীভাবে আইনী ব্যবস্থা নেয়া না হলে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।