রাষ্ট্রের নাৎসিবাদী চেহারা বিপদজনকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৬ পিএম, ১১ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০৯ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে সরকার। সরকার ইতোমধ্যে যে লক্ষ-লক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছিল, এখন সেই মামলাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে সাজা দেওয়া শুরু করেছে।
তিনি বলেন, অবৈধ পথে ক্ষমতায় থাকা এবং ভোটারবিহীনভাবে আগামী নির্বাচন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত করতেই একের পর এক সাজা দেওয়া হচ্ছে। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে নির্দোষ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া রাষ্ট্রের নাৎসিবাদী চেহারা বিপদজনকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, ভাষানটেক থানায় ইতোপূর্বে দায়ের করা মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলায় বিষ্ফোরকদ্রব্য আইনে গতকাল বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মীকে ৫ বছর কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যেই মামলায় তাদেরকে সাজা দেওয়া হয়েছে ঐ স্থানে এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। যদি আইন আদালত শেখ হাসিনার কব্জায় না থাকতো তাহলে এই মিথ্যা মামলায় সকলেই খালাস পেত। শেখ হাসিনার নির্দেশেই এসব শুরু হয়েছে।
পুলিশ বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে বানোয়াট মামলা দায়ের করেছিলো। এই মূহুর্তে উক্ত মামলায় সাজা দেওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত, দেশে-বিদেশে সরকারের অপকর্ম ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হয়ে পড়ায় জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এই সাজা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততোদিন বিরোধী দল, বিরোধী মত অবৈধ সরকারের নানাবিধ নিপীড়নের শিকার হতে থাকবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি'র এ নেতা।
রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিএনপি নেতাকর্মীদের এই সাজা দেওয়া। নির্বাচনের সময় পর্যন্ত এই গণধিকৃত সরকার কতো যে অমানবিক আচরণ করবে এটি তার একটি অন্যতম নমুনা। বর্তমানে নির্বাচন একটি দলের জিম্মার মধ্যে রয়েছে। ভোটাররা নয়, আওয়ামী সন্ত্রাসীরাই নির্বাচনী উৎসবে মেতে থাকে। কারণ একতরফা নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা থাকা পাকাপোক্ত হবে এবং তাদের সাথে যুক্ত লোকরা আরো বেশি জালিয়াতি ও দূর্নীতি করে টাকা পাচার করতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, তাতেও তাদের খায়েশ পুরো হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছায়। আওয়ামী সরকার ফলাফল ধরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। তারা সেই ফলাফলই ঘোষণা করে। আওয়ামী প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পঙ্কিল কালিমা লিপ্তের এক ঐতিহাসিক মাইলফলকে পরিণত করেছে।
আমি সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী যথাক্রমে সুমন চন্দ্র, সোহেল, কাউছার, আব্দুর রহমান, লিটন, মোঃ জসিম, আমিনুল ইসলাম, মোঃ জুয়েল, মোঃ শহীদ, আলমগীরের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সাজা বাতিলের জোর দাবী জানাচ্ছি। এবং শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র ও মানবতা বিরোধীদল নিধনের চক্রান্তমূলক এই নোংরা খেলা থেকে সরে আসার জোর দাবী জানান রুহুল কবির রিজভী।
এছাড়াও তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে গতকাল রাতে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেফতার প্রতিহিংসামূলক, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র চলমান গণ-আন্দোলনকে ঠেকাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২ ডোজে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে ৩০%। করোনা শুরু হয়েছে প্রায় ২ বছর। যদি শুরুতেই উদ্যোগ নিত সরকার তাহলে প্রায় শতভাগ করোনা টিকা দেওয়া সম্ভব হতো। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই ৬০%’র উপরে টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টিকা আর করোনা সামগ্রী নিয়ে সরকার কেলেঙ্কারি ছাড়া আর কিছু উপহার দিতে পারেনি। তারা যদি সঠিক ব্যবস্থা নিতো, যদি ৬০-৭০% লোককে টিকা দিতে পারতো তাহলে করোনা মহামারী বৃদ্ধি পাওয়ার কোন সুযোগই থাকতো না।
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শুধুমাত্র বিএনপি’র সভা-সমাবেশ ঠেকাতেই গতকাল জারি করা বিধি নিষেধ দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েই জনগণের প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে এবং ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সভা সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেছে মানুষ। এতেই আতঙ্কিত সরকার। যতোই চক্রান্তের জাল ফেলা হউকনা কেন, এই অবৈধ সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে, বিধি নিষেধ দিয়ে, চক্রান্ত করে জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।