ডুমুরিয়ায় বিএনপির গণসমাবেশ বানচালে তৎপর পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ১০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আগামী ১২ জানুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে বিএনপির গণ সমাবেশ কর্মসূচি বানচালে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্ততি নেওয়া এ কর্মসূচি বাঁধাগ্রস্থ করতে পুলিশের ইন্ধনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ওই একই দিনে একই স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের জন্য দরখাস্ত করেছে।
এদিকে ডুমুরিয়া থানার ওসি বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবেনা বলে সাফ জানিয়ে বলেছেন, আজ রাত থেকেই টের পাবেন এখানে কি ঘটে। পরে গতকাল রবিবার (৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতভর গোটা থানা ব্যাপি বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের চিরুনি অভিযান চলেছে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ১২ জানুয়ারির গণ সমাবেশ একটি মানবিক কর্মসুচি। খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চায়। কিন্ত অহেতুক উস্কানিমূলকভাবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাঁধাগ্রস্থ করা হলে প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে কর্মসুচি সফল করা হবে।
১২ জানুয়ারির গণ সমাবেশের সার্বিক প্রস্ততি এবং সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতারা এ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
আজ সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
বক্তব্য উপস্থাপনকালে জেলা বিএনপির আহবায়ক আমির এজাজ খান বলেন, কেন্দ্র থেকে মহানগর ও জেলা সদরের বাইরে থানা পর্যায়ে সমাবেশ আয়োজনের নির্দেশনা আসলে দলীয় ফোরামে আলোচনায় আমরা ডুমুরিয়ায় কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেই। ৬ জানুয়ারি আমরা পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করি কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করে প্রশাসনের সহায়তা চাই। তিনি সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।
এরপর ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের স্বাধীনতা চত্বর মাঠ ব্যবহারের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এবং মাইক ব্যবহার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করি। প্রাথমিকভাবে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললেও হঠাৎ করেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
এজাজ খান বলেন, জানতে পারি, ছাত্রলীগ-যুবলীগ একই দিনে একই স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করবে বলে থানায় দরখাস্ত করেছে। এরপর বিএনপির শীর্ষ নেতারা ওসির সাথে দেখা করতে গেলে তার আচরণ পাল্টে যায় এবং কোন মতেই ডুমুরিয়ায় বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবেনা বলে জানিয়ে দেন। তিনি প্রকাশ্যেই বলেন, দেখেন না আজ রাত থেকে কি ঘটে! এরপর রাতেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ থানা বিএনপির সভাপতি মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, সরোয়ার হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিম, শাহাদাত হোসেন, আব্দুস শহীদসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। এর আগে থানার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে আয়োজিত প্রস্ততি সভাস্থলে গিয়ে পুলিশ বাঁধাসৃষ্টি করে। ফলে রাতেই বিএনপি নেতাকর্মীরা নিরাপদ অবস্থানে থাকায় কেউ গ্রেফতার না হলেও পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে আতংক সৃষ্টি করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
বিএনপি নেতারা প্রশ্ন রাখেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ তারিখ। কেন সেটিকে ১২ তারিখে পালন করতে হবে? দেশে কি আর কোথাও জায়গা নেই? ডুমুরিয়াতেই এক সপ্তাহ আগে বিএনপি নির্ধারিত ভেন্যুতেই কেন তাদের কর্মসূচি দিতে হবে? বিএনপি নেতারা জানান, মহানগর ও জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়ন, গ্রাম এবং বিভাগের ১০ জেলা থেকে অন্তত এক লক্ষ লোকের জমায়েত ঘটানো হবে। বিএনপি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে মানবিক এই কর্মসূচি পালন করতে চায়। আপনারা যদি সহিংস আচরণ করেন এবং বাঁধা দেন আমরা প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে কর্মসূচি সফল করবো।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিএনপির কর্মসূচি পালন করার উদাহরণ টেনে তারা বলেন, প্রয়োজনে ডুমুরিয়াতেও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, মহানগর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির ও জেলা সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাজী মো: রাশেদ, খান জুলফিকার আলী জুলু, মোস্তফা উল বারী লাভলু, সাইফুর রহমান মিন্টু, কামরুজ্জামান টুকু, আশরাফুল আলম নান্নু, আজিজুল হাসান দুলু, মুর্শিদ কামাল, এহতেশামুল হক শাওন, শেখ সাদী, শের আলম সান্টু, রোবায়েত হোসেন বাবু, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, ইলিয়াস মল্লিক, তৈয়েবুর রহমান, মুজিবর রহমান, মো: মাসুদ পারভেজ বাবু, মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, একরামুল হক হেলাল, শামীম কবির, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, জাফরী নেওয়াজ চন্দন, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, শেখ ইমাম হোসেন, কাজী মিজানুর রহমান, নাজমুস সাকির পিন্টু, শাহনাজ ইসলাম, কাজী মাহমুদ আলী, রফিকুল ইসলাম বাবু, ইবাদুল হক রুবায়েদ, সরোয়ার হোসেন, শামসুল বারিক পান্না, মোল্লা কবির হোসেন, তারভীরুল আযম রুম্মান, শেখ জামালউদ্দিন, বদরুল আনাম খান, শাহাবুদ্দিন মন্টু, গাজী আফসারউদ্দিন মাস্টার, কাজী শাহনেওয়াজ নীরু, এইচ এম আসলাম, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, মতলেবুর রহমান মিতুল, সিরাজুল ইসলাম লিটন, বেগ তানভিরুল আযম, হাসিনুল ইসলাম নিক, আলী আক্কাস, তরিকুল ইসলাম তারেক, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম বাচ্চু, সজিব তালুকদার, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি, মনিরুজ্জামান লেলিন, গোলাম মোস্তফা তুহিন, শেখ হেমায়েত হোসেন, সেতারা সুলতানা, শাহনাজ সরোয়ার প্রমুখ।
এদিকে প্রেস ব্রিফিং শেষে জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ গণ সমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে মহানগরী এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন।
থানার মোড় থেকে কর্মসূচি শুরু হয়ে পিকচার প্যালেস, বড় বাজার, হেলাতলা, কে ডি ঘোষ রোড, নগর ভবন, কেসিসি মার্কেট, আদালত এলাকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়।