সাংবাদিক সমাবেশে রিজভী
সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগেও ‘জ্যেষ্ঠতা’ লঙ্ঘন হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৯ পিএম, ১০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:১৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগেও ‘জ্যেষ্ঠতা’ লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার দুপুরে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজির মুক্তির দাবিতে সাংবাদিকদের এক মানববন্ধনের গত কয়েকদিন আগে আপীল বিভাগে চারজন নতুন বিচারক নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, ‘‘ সাংবাদিকরা অনেকে বলেছেন, হাইকোর্টের বিচারের কথা। আপনারা (সাংবাদিকরা) ২/৩দিন আগে দেখেছেন যে, ১৯জন টপকিয়ে অ্যাপিলেট ডিভিশনে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৯ জনকে টপকিয়ে।”
‘‘ কারণ তাদের(সরকার) বিশ্বস্ত লোক অ্যাপিলেট ডিভিশনে দরকার। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অ্যাপিলেট ডিভিশনে নাই। এই কারণে এই ধরনের আদালতে এই ধরনের বেআইনি কাজ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে রুহুল আমিন গাজি অবশ্যই মুক্তি পেতেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে জনগনের চোখকে ধুলা দেয়ার জন্য, জনগনের দৃষ্টি অন্য দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য তিনি(প্রধানমন্ত্রী) তামাশা করছেন। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে তিনি আবার সংলাপ দেখাচ্ছেন। আরে কিসের সংলাপ? আমরা আগে দেখতাম ট্রেনে-বাসে বড়ি বিক্রি করতে হকার অত্যন্ত মজার মজার চমকপ্রদ অনেক কাহিনী বলতো, গল্প বলতো, মানুষ আকর্ষন করতো। তারপরে সে বড়িটা বিক্রি করতো।”
‘‘এই রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সেই ধরনের হকার-সংলাপের নামে রাষ্ট্রপতি হকারগিরি করছেন। কারণ আল্টিমেটলি যে নির্বাচন কমিশন বানানো হবে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটবে। তার আগে একটা তামাশা করে যাচ্ছেন, তার আগে একটা হকারের সেই চমকপ্রদ কাহিনী তিনি করছেন। কারণ প্রত্যেকটার পেছনে এই সরকার তার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার, চিরদিন টিকে থাকার জন্য যা কিছু করা দরকার তিনি সেটা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা হয় না।”
তিনি বলেন, ‘‘আস্তে আস্তে বাংলাদেশের মানুষ তো জানে, এখন পৃথিবীর মানুষের কাছেও এই সরকারের আসল চেহারা খুলতে শুরু করেছে। আমি বলব প্রধানমন্ত্রীকে, আপনার সরকারের সম্পূর্ণ মুখোশ উন্মোচনের আগে পদত্যাগ করুন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাকে চিকিৎসার সুযোগ দিন, রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন।”
‘‘তা না হলে সব কিছু উন্মোচন হয়ে যাবে। উন্মোচন তো হচ্ছেই, যখন সম্পূর্ণ উন্মোচন হবে আর পালিয়েও নিজের মুখ ঢাকতে পারবেন না।” বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সরকার ‘বিদেশে অর্থ পাঁচার করা হচ্ছে, দেশে মাদক প্রবেশ করছে’ বলে অভিযোগও করেন রিজভী।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে এই মানবন্ধন হয়। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফাতার করে পুলিশ।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘‘রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে আমরা একটি বছর রাজপথে আন্দোলন করছি। তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলে ভরা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর এই সরকারের আক্রোস খুব স্বাভাবিক। কারণ যারা ভোটে নির্বাচিত হয় না, যারা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা একদলীয় শাসন কায়েম করতে পারে তাদের জন্য এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।”
‘‘সাংবাদিকদের প্রতি সরকারের যে আক্রোস এই আক্রোসের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা জানতে পারছি, শুনতে পারছি যে, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন নামে একটি কালো আইন সরকার প্রনয়ন করতে যাচ্ছে সেখানে সাংবাদিকদের অনেক অধিকারকে বিলুপ্ত করে দিতে চাচ্ছে এই সরকার। আমরা সরকারকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের নামে সাংবাদিকদের হরণ করা যাবে না।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি বলেন, ‘‘আমরা মনে হয়, বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে সাংবাদিকরা এমন দুঃসময় অতীতে অতিক্রম করেনি। এতো বেশি রাজপথে সাংবাদিকদের আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়নি। এমন কোনো সম্পাদক পাবেন না, এমন কোনো ক্রীড়াশীল সাংবাদিক পাবেন না, এমন কোনো সাংবাদিক নেতা-কর্মী পাবেন না যার বিরুদ্ধে এই সরকারের আমলা মামলা নেই। এমনকি সরকারের দালাল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত মামলা দিয়ে তাদের আরো কোনঠাসা করে রেখেছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার।”
‘‘ অবাক হবেন গত ১৩ বছরে অর্ধশত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচারে সকল মতের সাংবাদিক নেতারা এককাতারে আন্দোলন করেছিলো, সেই সাগর-রুনির হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ৮৪ বার পিছিয়েছে। দুনিয়ার ইতিহাসে এই ধরনের নজির আছে কিনা আমরা জানি না।”
আদালতের প্রতি অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজীকে জামিন প্রদানের আহবানও জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার দেখেছি-গণমাধ্যম আইন অবিলম্বে পাস করতে হবে। আমাদের কিছু সাংবাদিক বন্ধু এখানে ব্যানার লাগিয়েছেন। কোন আইন সেটা? সেই আইনের মধ্যে আমি দেখলাম আমাদের সামনে যে ফটো সাংবাদিক বন্ধুরা আছেন, ক্যামেরাপারসনরা আছেন তাদেরকে সেখানে সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় নাই। তাদেরকে বলা হয়েছে কলা কৌশলী।”
‘‘সাংবাদিক হিসেবে কাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে? সেখানে সাংবাদিক হিসেবে মালিকদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা মালিকদের তল্পিবাহক, তারা নিপীড়ক, প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে যারা সাংবাদিকদের বঞ্চিত করে তাদেরকে সাংবাদিকদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তারা কোনোভাবে সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না। আজকের এই সমাবেশ থেকে আমি এই আইন প্রত্যাখান করছি, এই আইন সংশোধন করতে হবে, সাংবাদিক সুরক্ষার নামে এসব ভাওতাবাজী চলবে না।”
রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন আরো কঠোর করার হবে হুশিয়ারিও দেন বিএফইউজের এই শীর্ষ নেতা।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় এই মানবন্ধনে বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাংবাদিক নেতা কামাল উদ্দিন সবুজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বাকের হোসাইন, মোদাবের হোসেন, খায়রুল বাশার, শাহিন হাসনাত, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, পেশাজীবী নেতা ডা. মাজহারুল আলম, রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফরান গাজী, যুবদল নেতা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।