রাষ্ট্রপতির সংলাপের নামে আবারো সরকার ক্ষমতায় থাকার কলাকৌশল শুরু করছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৫ পিএম, ৮ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩০ এএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
রাষ্ট্রপতির সংলাপের নামে আবারো সরকার ক্ষমতায় থাকার নানা কলাকৌশল শুরু করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার (৮ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই ‘মানব সমাবেশ’ হয়। এতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের নেতা-কর্মী ছাড়াও যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন।
এদিকে মানব সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের সামনে উপস্থিত হয়। এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন সেøাগানে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন তারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবারো বিভিন্ন রকম কলাকৌশল শুরু করেছে। রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন। কিসের সংলাপ? এই সংলাপ ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে। তারা পরিষ্কার করে বলেছে যে, এই সংলাপে লাভ হবে না, অর্থহীন সংলাপ। নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নাই যদি নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার নিরপেক্ষ না হয়। বর্তমান সংকট উত্তরণে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সংকট উত্তরণে আমাদের খ্বু স্পষ্ট কথা সবার আগে গণতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তারপরে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগণের ভোটের ক্ষমতাকে ফিরিয়ে দিন। এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন জনগণের দাবি, এটা গণদাবি। এই দাবি অবশ্যই সরকারকে মেনে নিতে হবে। যদি সরকার এই গণদাবি মেনে না নেয়, তাহলে গণ দাবি অস্বীকার করার জন্য অতীতের সরকারগুলোর যে অবস্থা হয়েছে; এই সরকারের সেই পরিণাম ভোগ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি এই দুইটিকে এক করে সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আজকে এখানে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এসেছেন। আমি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানাতে চাই, রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রতি আহবান জানাতে চাই যে, আসুন আজকে বৃহত্তর স্বার্থে আাজকে আবার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা বাংলাদেশ, একটা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করি, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করি।
মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমগ্র দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যে তিনি বলেছেন, তিনি তার শাসনামলে এদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে গেছেন এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তাকে থাকতে দেন। এই ১৩ বছরে এদেশে সাধারণ মানুষ দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়েছে। ৪ কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে, ৯ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে এবং বড় লোক আরো বড়লোক হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের লোকেরা যারা আজকে অন্যায়ভাবে সমস্ত সুযোগ গ্রহণ করছে। তারা আজকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে দিয়ে সম্পদ গড়ছে। আজকে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ৫শর অধিক মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের আজকে হাজারো নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে সমস্ত দেশের মানুষের আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কালকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভাষণ দিয়েছেন জনগণের উদ্দেশ্যে, জাতির উদ্দেশ্যে। এই জনগণের সামনে যদি বলেন, আপনাদের ভোটে আমি নির্বাচিত, আপনারা ভোট দিয়েছেন। এটা ঠাট্টা মস্করা। এটা মিথ্যা কথা বলা ছাড়া আর কিছুই না। আমরা বলতে চাই, এই মস্করা করার দিন শেষ। বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। আপনাকে বিদায় নিতে হবে। ডানে-বামে যাওয়ার জায়গা নেই, বিদেশে যাবেন ভিসাও বন্ধ।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, এরা কোনো নির্বাচন কমিশন বানাতে পারবে না, এরা নির্বাচন কমিশন বানালে সেই নির্বাচন কমিশন মানি না। ওদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ওরা চলে যাবে। চলে যাবার পরে আমরা যারা আন্দোলন করেছি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমরা নতুন সরকার বানাব, নতুন করে নির্বাচন কমিশন বানাব। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। ওই নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে আসুন আজকে আমরা শপথ গ্রহণ করি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনি আবার বলেছেন, ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে আমি তোমাদেরকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছি, ৪১ সাল পর্যন্ত আমি তোমাদেরকে ধনী দেশ বানাব। মানে কী? ৪১ সাল পর্যন্ত উনি থাকতে চান। আহারে কত শখ! ৪১ সাল নয়, ৪১ মাসও নয়। খালি দিন গুনতে থাকেন। ওদের পতনের ঘন্টা বাজছে। সেই ঘন্টার সাথে সুর মেলান। খালি একদিন বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচির মাধ্যমে এদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হবে।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহবায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী, সদস্য আমীরুল ইসলাম আলীম ও মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মশিউর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, কল্যাণ পার্টিও চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির আবু তাহের, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সহ- সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মতস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।