আজ গণতন্ত্র হত্যা দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২০ এএম, ৫ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে আজ সেই কালো ৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মানুষের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী গোষ্ঠী।
গণতন্ত্রকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে সেদিনের এই একতরফা নির্বাচন বয়কট করেছিল ৩১টি রাজনৈতিক দল, আর আওয়ামীদের সাথে থাকা চৌদ্দদলীয় জোটে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছিল ৪টি, সেগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ আর মেননের দলটি। এই নির্বাচনের ভোট পড়েছিল ৫%। যদিও নির্বাচন কমিশন দেখিয়েছে ভোট পড়েছিল ১১%। ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও কুকুরের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনি ব্যবস্থা তুলে দিয়েই দেশে বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে দেন। এর আগে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৬ সালে রাজপথে রক্তপাতের নির্দেশ দেন। বিএনপি যাকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে তারা তাকে মানবে না, পরিশেষে লগি- বৈঠা নিয়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজপথে মানুষ হত্যা করে ১/১১’র মইন-ফখরুদ্দীনদের এনে হাসিনা বলেছিলেন এটি আমাদের আন্দোলনের ফসল, পরে তারা ক্ষমতার লোভে সকলকে গ্রেফতার করে।
বাদ পড়েনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা চলে যান লন্ডনে আর বেগম খালেদা জিয়া তাদের সাথে আপস করেননি। তারপর প্রহসনের নির্বাচন করে ২০০৯ সালে এসেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে।
এতে ১৫৩ জন বিনাভোটের সংসদ সদস্য নিয়ে সরকার গঠন করে দেশের শাসনব্যবস্থা, বিচারবিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা, খুন-গুম বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চা শুরু করে । তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশে আবারো তামাশার নির্বাচন আয়োজন করে আওয়ামী লীগ সরকার। পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে সারা রাতভর ভোট দিয়ে বাক্স নিজেরাই ভরেছে, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের ভোট দেয়া থেকে বিরত রেখেছে। নিজেরাই ভোট দিয়ে বাক্স পুরিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের অধীনে সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ফ্যাসিবাদের চিত্র বিরাজমান রয়েছে। যার ফলে স্থানীয় নির্বাচনগুলো বয়কট করেছে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। স্থানীয় নির্বাচনে চলছে খুনের মহোৎসব। আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেদের কর্মীদের হত্যা করছে। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলগুলো।
গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সরকারের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা ছিল কিম্ভূতকিমাকার ও উদ্ভট, একতরফা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, পাইকারি হারে জালভোট দেয়া, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, গায়েবি ভোট, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়াসহ একের পর এক অভিনব ভোট।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই গণতন্ত্রকে পাত্তা দেয় না। জনগণের ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাসী-অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিল। এরপর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। আওয়ামী লীগের সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, উদার মনোভাব, সবার একত্রীকরণ, সাংস্কৃতিক অনুরণন, বিনা বাধায় নিজের পছন্দমতো বিশ্বাস নিয়ে চলার অধিকার নেই।
তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে যে সরকার ক্ষমতায় বসে আছে সে ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে একই কায়দায় মানুষের অধিকার হরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলে আগের রাতে ভোট দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বর্তমানে দেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসিত। মানুষের বাক-স্বাধীনতায় তালা মেরে দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে নেয়া হয়েছে। বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের আয়নায় সবকিছু দেখতে গিয়ে আইনের শাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।