বিএনপিতে পুনর্জাগরণ : নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২১ পিএম, ৪ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১১ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশ পাঠানোর দাবি কেন্দ্র করে উজ্জীবিত ও দেশব্যাপী সংগঠিত দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সৃষ্টি হয়েছে চাঙ্গাভাব। নেতাকর্মীরা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন। বেগম খালেদা জিয়া ইস্যুতে নেতায় নেতায় জিইয়ে থাকা কোন্দলেরও হচ্ছে নিরসন। যারা পদবঞ্চিত তারাও যোগ দিচ্ছেন এসব কর্মসূচিতে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আরও কঠোর কর্মসূচির দাবিও জানাচ্ছেন। জেলা সমাবেশ শেষ হওয়ার পর আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে চেয়ারপারসনের চিকিৎসা কেন্দ্র করে বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে পুনর্জাগরণ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সম্পর্কে মিডিয়াকে বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। শুধু বিএনপি নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকার এ দাবিকে তোয়াক্কাই করছে না। আমরা চাই আমাদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার অতি দ্রুত তাঁকে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নামটি নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত আবেগের। তাঁর এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভও জন্ম নিয়েছে। তাঁর চিকিৎসার দাবিতে বলতে গেলে সারা দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। সরকারের অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। জেল-জুলুম-হুলিয়ার ভয় না করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে পড়েছে। প্রতিটি সভা-সমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী সমবেত হচ্ছে। ১৪৪ ধারাকেও তারা পরোয়া করছেন না। বলা যায় দলে নতুন করে পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। অনেককে হত্যা ও গুম করা হয়েছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। পদে পদে লঙ্ঘন করা হচ্ছে মানবাধিকার। সবকিছু মিলিয়ে জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন একটা গণঅভ্যুত্থান। আমরা সেই অভ্যুত্থানের ওয়ার্মআপ করছি। সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠালে পরিস্থিতি সেদিকে মোড় নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ওই সময় সারা দেশে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন করে বিএনপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। ওই আন্দোলনে লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতাসহ গ্রেফতার হন অনেকে। সাংগঠনিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। সরকারের নানা নির্যাতন এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলে গতি ফেরাতে ব্যর্থ হয় হাইকমান্ড। আন্দোলনের ডাক দিলেও কার্যত তা সফল হয়নি। আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ঘর থেকে বের হননি। এতে হতাশ হয়ে পড়ে তৃণমূলও। নানা ইস্যুতে কেন্দ্র ও তৃণমূলের মধ্যে বাড়তে থাকে দূরত্ব। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশের বেশিরভাগ জেলায় নির্বাচনি জনসভা করেন।
গত বছর ১১ এপ্রিল মাসে খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা থেকে সুস্থ হলেও নানা অসুখে জর্জরিত হয়ে পড়েন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁকে বিদেশ পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আবেদন করা হলেও তা নাকচ করা হয়। চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। শুরুতে ঢাকায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও গণঅনশন পালন করা হয়। এরপর মহানগরীতেও একই কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু নানা কর্মসূচি পালনের পরও সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এমন পরিস্থিতিতে দলের করণীয় চূড়ান্তে দফায় দফায় বৈঠক করেন নীতি-নির্ধারকরা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে সারা দেশে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নতুন উদ্যোগ নেয় হাইকমান্ড। এর অংশ হিসাবে দেশের ৩২টি জেলায় সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এ কর্মসূচি। ইতিমধ্যে অনেক জেলায় সমাবেশ পালন করা হয়। এসব সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও এক দশক বা এক যুগ পর হচ্ছে এমন সমাবেশ। দীর্ঘদিন যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, যারা পদবঞ্চিত তারাও যোগ দিচ্ছেন এসব কর্মসূচিতে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ অসন্তোষকে বুকে চেপে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে নেতাকর্মীরা আজ ঐক্যবদ্ধ।
জানতে চাইলে বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। এর সফলতা আসবেই।
সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মিডিয়াকে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। তাঁর কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। আজ তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার তাঁকে বিদেশ পাঠাতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমতাবস্থায় কঠোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
মিডিয়াকে তারা আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে নেতাকর্মীরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। সারা দেশে জেলা পর্যায়ে যে সমাবেশ হচ্ছে তাতে শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছে। চেয়ারপারসনের চিকিৎসা কেন্দ্র করে বিএনপিতে নতুন করে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। সামনে তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে বলে আশা করি।