জনস্রোতে ভীত হয়ে সরকার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আবারো মামলা দিচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৩ পিএম, ২ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপির কর্মসূচিতে জনস্রোতে ভীত হয়ে সরকার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আবারো মামলা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দা্বেিত ৩২ জেলায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার ঘটনা তুলে ধরে আজ রবিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় ৩২টি জেলায় আমাদের যে শাস্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এর মধ্য দিয়ে যে দাবি আদায়ের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি এতে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ এবং এই অনির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক শক্তির ওপরে আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, হামলা করছে, গুলিবর্ষণ করছে, গায়েবি মামলা দিচ্ছে।
এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই দেশের জনগণ একবারও চায় না যে, এই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকুক এবং এভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করুক। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশনেত্রীর মুক্তি দেশের মানুষ এই মুহূর্তে চান এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য বিদেশে এই মুহূর্তে পাঠাতে চান।
সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফেনী, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, গাজীপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলোতে পুলিশি বাধা, হামলার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে প্রায় ৩২ জেলায় এই দাবিতে আমরা সমাবেশ করেছি। এই সমাবেশগুলোতে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এটাতে উদ্বিগ্ন হয়ে, ভীত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-নেতা এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা প্রতিটি কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করেছে, চেষ্টা করেছে। প্রথম থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি আক্রমণ, কখনো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দিয়ে আক্রমণ করে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করেছে।
অতীতের মতো নির্যাতন, গুম, খুন, গুলিবর্ষণের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম যে লড়াই তাকে ব্যাহত করতে চায়। আমরা একথা দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে এবং তারা রাজপথের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের দাবি আদায় করবে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবে, দেশনেত্রীর মুক্তি এবং একই সঙ্গে তাঁকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করতে সক্ষম হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি স্থায়ী কমিটির সোমবারের বৈঠকে নেয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
অস্ত্রধারীদের হামলা অশুভ লক্ষণ : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সমাবেশে আপনারা দেখেছেন, পত্রিকাগুলোতে এসেছে যে, সমস্ত অস্ত্র অবৈধ। একটা ছবি দেখলাম যে, ইম্পোর্টেড, চক চক করছে নতুন রিভলবার। দেশি নয়, বিদেশি রিভলবার। এই যে দেশের মধ্যে অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে এসে গেছে- এটা শুভ লক্ষণ নয়।
এই অস্ত্রধারীরা হলো, সিরাজগঞ্জের মধ্যপাড়ার বায়েজিদ, দত্তবাড়ীর সুজয়, কোল গয়লার সুমন ও জনি চারটি পিস্তল নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলা চালায় যা পত্রিকা ও মিডিয়াতে ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুব লীগের সদস্য। অথচ এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। সন্ত্রাস করবে তারা, আবার তারাই বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার ও তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা তিন দিন আগে প্রশাসনকে জানালাম অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে রেডি হচ্ছে-আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এরপর সমাবেশের দিন মারমারি হলো, জনগণ প্রতিহত করলো। এখন পর্যন্ত ৬টা মামলা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। তারমধ্যে সরকার বাদী হয়ে মামলা করেছে ৪টা এবং আওয়ামী লীগের লোকজন করেছে ২টা। গতকাল আমরা মামলা করতে গিয়েছিলাম রাতের বেলা। কিন্তু আমাদের মামলা নেয়া হয়নি।
যারা অস্ত্র নিয়ে সমাবেশের দিন ঘুরে বেড়াল, পত্রিকায় ছবি আসলো তাদের বিরুদ্ধে কেনো মামলা হলো না। যারা আক্রান্ত তাদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করল। এই হচ্ছে সিরাজগঞ্জের অবস্থা। ১৯৭১ সাল থেকে ৭৫ পর্যন্ত এই আওয়ামী লীগ এভাবেই সারাদেশে সন্ত্রাস করেছিলো যা নতুন প্রজন্ম অনেকে জানেন না। আওয়ামী লীগের চরিত্রই হচ্ছে সস্ত্রাসী।
তিনি বলেন, এটা আজকে পরিষ্কার যে, বাংলাদেশেরে মানুষ এক মুহূর্ত এই সরকারকে দেখতে চায় না। যদি দেখতে চাইতো তাহলে সেদিন সিরাজগঞ্জে এতো মানুষের ঢল নামতো না। আওয়ামী লীগ দেশটাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সময় এসেছে জনগণকে প্রতিরোধ করতে হবে। ৩০ সমাবেশে ক্ষমতাসীনদের হামলায় অসংখ্য নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার বিভিন্ন আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মশিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও ঢাকা মহানগরের সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।