সিদ্ধিরগঞ্জে ৩নং ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী বাদল বাহিনীর শতাধিক সন্ত্রাসী মাঠে : ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৭ পিএম, ২ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪১ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নাসিক সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নং ওয়ার্ডে সহিংসতা করে কাউন্সিলর হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নরঘাতক হিসেবে পরিচিত নূর হোসেনের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা শাহজালাল বাদল। বিগত নির্বাচনের ন্যায় এবারো প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর ও হমকি ধমকি দিয়ে একক আধিপত্যবিস্তার করছে সে। মানছেনা নির্বাচন আচরণ বিধি। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের পোষ্টার লাগাতে ও প্রচারণা চালাতে না দিলেও নিজে ওয়ার্ড এলাকায় কমপক্ষে ১৮টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছে। অথচ নির্বাচন অফিস থেকে একটি ক্যাম্প করার নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচনী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ইতোমধ্যে দুইটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে বাদল বাহিনী। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভূক্তভোগীরা।
অভিযোগ জানা গেছে, প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা থেকে বিরত রাখতে বাদল বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীকে সংঘঠিত করেছে। এলাকার মাদক সম্রাট, ডাকাত, ছিনতাইকারী, কিশোরগ্যাংসহ শতাধিক সদস্যের একটি বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে বাদল। এসব বাহিনী বাদলের প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের এলাকায় পোষ্টার লাগাতে বাধা ও গণসংযোগ করতে দিচ্ছে না। গত ২০১৬ সালের নির্বাচনে বাদল পেশি শক্তি প্রয়োগের যে ছক একেঁছিল, এবারের নির্বাচনেও ঠিক সেই ছক একেঁছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রন করে শক্তি প্রয়োগ করে আবার কাউন্সিলর হওয়ার চেষ্টা করছে বাদল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে. মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি কিশোরগ্যাং নেতা হিরণ, লিটন ওরফে হাতুড়ি লিটন, ডাকাত রতন, সন্ত্রাসী হাবিব, তুষার, সাইফুল, তাহেরুল, মহিউদ্দিন, যুবরাজ ওরফে যুব, সাকের রিপন, রাব্বি, রাকিব, নসু, আবির, রোমান, তৈহিদ, আনাস, রাজু, মান্না, সালামান ও সায়েমসহ মুক্তিনগর, আদর্শনগর, রসুলবাগ, মাদানীনগর এলাকার শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বাচন উপলক্ষে ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লায় দিন রাত মহড়া দিচ্ছে। এই বাহিনীর সাথে রয়েছে নুর হোসেনের পলাতক সন্ত্রাসীরাও। তারাও এলাকায় ফিরে এসেছে। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন নির্বাচনি প্রচারণায় নামলেই এসব সন্ত্রাসীরা মারধর ও হুমকি ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাদল একই কাজ করেছিল গত ২০১৬ সালে। সেই নির্বাচনে যেন প্রার্থী না হয়ার হুমকি দিয়েছিল সানারপাড়ের তোফায়েল হোসেনকে। কিন্তু তোফায়েল বাদলের কথা না শোনায় ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর রাতে নিজ বাড়ীর সামনে পেয়ে তোফায়েলকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় বাদল বাহিনী। ভাগ্যগুণে তোফায়েল প্রাণে বেঁচে যান। সেই ঘটনায় বাদল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ফাঁসির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভসহ প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। বাদলকে প্রধান আসামি করে মামলাও হয়। পরে দলীয় শীর্ষ নেতারা তোফায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করে মিমাংশার ব্যবস্থা করেন। এতে পার পেয়ে যায় বাদল ও তার বাহিনী।
একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর জানান, নির্বাচন আসলেও বাদল রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠে। যেই তার প্রতিপক্ষ হয় তাকেই মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়ে নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। গত নির্বাচনেও বাদল বাহিনী আমার বাড়ী ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মারধর করেছে। এবারো ইতোমধ্যে দুই বার আমার লোকজনের উপর হামলা করে রক্তাক্ত জখম করেছে। তার রক্তের হলি খেলা বন্ধ না হলেও ৩নং ওয়ার্ডে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবেনা। দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মাইকিং করার নিয়ম থাকা সত্তেও বাদাল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকিং করছে। নির্বাচনি ক্যাম্প বানিয়েছে ১৮ টি। জনগণের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে অবাদ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে সকল প্রার্থী যেন স্বাধীনভাবে তাদের নির্বাচনি কাজ করতে পারেন প্রশাসনের প্রতি সে দাবি জানান আলমগীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, বিগত দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে শাহজালাল বাদল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল, ড্রেজার ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। আগের ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করে ছিনিয়ে নেয় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা। রাস্তা প্রশস্থ করতে গিয়ে সড়কের এক পাশের বাড়ীর মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আরেক পাশের বাড়ী ভাংচুর করে। এসব কারণে এলাকাবাসী বাদলের প্রতি ক্ষুব্ধ। তাই বাদলের মনে পরাজয়ের ভয় প্রবেশ করায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের মারধর ও হুমকি ধমকি দিয়ে নির্বাচনি মাঠ থেকে সরিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।