আ'লীগের দিন শেষ হয়ে এসেছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৩ পিএম, ১ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪০ এএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আওয়ামী লীগের দিন শেষ হয়ে এসেছে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ঘন্টা বেজে গেছে, আমাদের কথা নয়। ওই দেখেন পশ্চিমাবিশ্ব গণতন্ত্রের প্রধান যাদের বলা হয় সেই আমেরিকা তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিচ্ছে। কাদেরকে দিয়েছে যারা আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টি করেছে। হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, তুলে নিয়েছে, গুম করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই কিন্তু এই সাজা এসেছে। সুতরাং ঘন্টা বেজে গেছে। আর সময় নাই, এখন উল্টাপাল্টা এদিক সেদিক করে কথা বলে কোনো লাভ হবে না।
সোজাসুজি এখনো সময় আছে-এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। এবং তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন দিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসকরা বারবার বলছেন তাঁর চিকিৎসা দরকার বিদেশে। ওনারা (সরকার) বিভিন্ন প্রকার টালবাহানা করছেন। আইন নেই? তাহলে ১/১১’র পর শেখ হাসিনা কিভাবে কান দেখাতে আমেরিকা গিয়েছিলেন? কিভাবে মোহাম্মদ নাসিম জেল থেকে সোজা সিঙ্গাপুর চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন? জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রবকে জিয়াউর রহমান কিভাবে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠিয়েছিলেন। আসলে আইন কোনো ব্যাপার নয়-৪০১ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সুতরাং আর টালবাহানা করে লাভ নেই। পদত্যাগ করেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অথবা আপনারা নিজেরা যাওয়ার জন্য তৈরি হন। আমরা অনেক কথা শুনতে পাই- মন্ত্রীরা নাকি পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলেছে। কে কোথায় যাবেন সেই ব্যবস্থাও নাকি হয়ে গেছে। তাহলে এতো দেরি করে লাভ কী তাড়াতাড়ি যান। দেশের মানুষ রেহাই পাক, স্বস্তি পাক।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নল ধরে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। যেখানে বিচারকদের সুপারসিড করে নিয়োগ দেয়া হয় সেক্ষেত্রে দেশে ন্যায় বিচার কতটুকু তা আমরা জানি।
আজ শনিবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কি আওয়ামী লীগ করে? প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নির্বাচন আওয়ামী লীগ করে না। নির্বাচন করে সরকারি কর্মকর্তারা। নির্বাচন করে পুলিশের লোকেরা। আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হয় না। তারা নির্বাচন করলে হয় আগের রাতে করে দেয় নতুবা ওইদিনেই বিশেষ পদ্ধতিতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা করে দেয়। যা তারা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে করছে। আজকের শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ৭১ সালের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
বিচার বিভাগ প্রসেঙ্গ বিএনপির এই নেতা বলেন, বিচার বিভাগ যেখানে মানুষ শেষ মুহূর্তে যায় ভরসা পাবে বলে। সেখানেও আজ পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়েছে। যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। সুপারসিড করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয় সেদেশে বিচারের স্বাধীনতা কতটুকু আছে, ন্যায়বিচার কতটুকু পাওয়া যাবে তা আমরা সবাই জানি।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দেখতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, কালকে পদ্মা সেতুর ওপরে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছেন। ভালো কথা আমাদের আপত্তি নাই।ছবি আপনারা তোলেন, অবশ্যই তোলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেন কিন্তু আমার সাধারণ মানুষের মোটা ভাত মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। ফাইভ স্টার হাসপাতাল তৈরি হয় কিন্তু সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবার সুযোগ পায় না। শ্রমিকরা তার মজুরি পায় না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। খুব বড় করে কথা বলেছিলেন ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবো অথচ আজ ৭০ টাকাতেও চাল পাওয়া যায় না। জ্বালানি তেলের দাম ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহনীয় হয়ে পড়েছে মানুষ অথচ তারা বলছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। জাতি বাঁচাতে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে সবাইকে আত্মত্যাগ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও হাবিবুর রশিদ হাবিব, রাজিব আহসান, আকরামুল হকসহ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতারা।
সভাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।