বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ক্রসফায়ারের হুমকি পেয়েছি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৬ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়েছিল। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নানা ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা জানান।
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে ‘একাদশ নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি’র তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভোটাধিকার হরণের কালো দিবস’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮- এই তিনটি নির্বাচন তিনটি কৌশলে বৈতরণী পার করেছে আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের কৌশলটা আমরা আগে বুঝতে পারিনি। ওই নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের তত্ত্ববাধায়নে ৪০ হাজার ভোট বাক্সে রিজার্ভ রাখা ছিল। আমার জানা মতে, কোনো একটি আসনে ৪০ হাজার ভোট ব্যালট বাক্সে রিজার্ভ রাখার পরও সেখানে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে ছিল। পরে অন্য জেলা থেকে এনে তা পূরণ করা হয়। এ নির্বাচনটা ছিল যারা এক-এগারোতে অন্যায় করেছে, তাদের বেঁচে থাকা এবং শাস্তির আওতায় না আসার জন্য একটি চুক্তি।’
তিনি বলেন, ‘সেই চুক্তি অনুযায়ী মঈন ইউ আহমেদ বা তথাকথিত যে সরকার সেই সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়।’
গয়েশ্বর আরো জানান, একই ধরনের প্রস্তাব আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও দেয়া হয়েছিল।
তার দাবি, এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেন-দরবার না করায় সরকারি একটি সংস্থার এক সদস্য তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখান।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আইন ও সংবিধানের বাইরে তিনি যাবেন না। কারণ, দেশটা জনগণের।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সেটাও আপনারা জানেন। ১০ হাজার ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স যায়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও যেতে পারেননি।’
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এই নির্বাচনটা আরেক কায়দায় হলো। আমাদের দুর্বলতা একটা জায়গায়- আওয়ামী লীগ কী করবে সেটা আমরা আগাম বুঝতে পারি না। ঘটনা ঘটানোর পর আমরা বুঝতে পারি। দিনের ভোট রাতে কাটছে-এটা কে বুঝবে? কেউ-ই তো ভাবে নাই। আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম একটি কারণে যে গণতন্ত্রটা সচল থাকুক। ক্ষমতায় যাওয়াটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না।’
র্যাবের ওপর মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘র্যাব সন্ত্রাস দমন করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আজ র্যাবের বিষয়ে বিদেশে যে পর্যবেক্ষণ, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় যাদের নাম এসেছে দোষটা তো তাদের নয়, আইন মেনে তারা যদি কর্ম করত এই দোষে দুষ্ট হতো না। তারা একজন ব্যক্তির ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি কখনো ক্ষমতায় যাওয়াটা মূল লক্ষ্য মনে করে না। ১৯৯১ সালেও ম্যাডাম কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি ক্ষমতায় যাবে-এমন বক্তব্য তিনি দেননি। দেশের মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছেন।’
খালেদা জিয়ার উদারতা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের উদারতা কেমন সবাই জানি। কিন্তু খালেদা জিয়া কেমন উদার-১৯৯১ সালে বরিশালের উজিরপুর থেকে বিএনপি থেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের স্ত্রী সায়মা জলিল। তার ইচ্ছাটা আমি ম্যাডামকে জানালাম। ম্যাডাম আমাকে বললেন, আমি জানি সায়মা যদি নির্বাচন করে পাশ করবে। কিন্তু ওখানে রাশেদ খান মেনন আছে, উনি একজন রাজনীতিবিদ, তিনি নির্বাচিত হয়ে আসুক। সেখানে একজন দুর্বল প্রার্থী দেয়া হলো। অনুরূপভাবে ড. কামাল হোসেন পার্লামেন্ট আসুক, সেই কারণে তিনি ওই এলাকায় একদিনের জন্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচারেও গেলেন না। এই হচ্ছে খালেদা জিয়ার উদারতা।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, নিতাই রায় চৌধুরী, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম বক্তব্য রাখেন।