ঘাতক কনস্টেবলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি পরিবারের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ১২ জুন,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৪১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
গুলশানের বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে সহকর্মীর গুলিতে কনস্টেবল মনিরুল হকের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার ও স্বজন। মনিরুলের শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী, মা এবং স্বজনরা। বাবার কফিন ধরে কাঁদছিল মনিরুলের ১৮ মাসের অবুঝ শিশুপুত্র। স্বজনরা গ্রেফতার হওয়া কনস্টেবল কাওসার আলীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে সোমবার নেত্রকোনার গ্রামের বাড়িতে মনিরুল হককে দাফন করা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে গুলশানের বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় দায়িত্বরত কনস্টেবল মনিরুল হককে গুলি করে হত্যা করে আরেক কনস্টেবল কাওসার আলী। এ ঘটনার পর প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় কনস্টেবল কাওসার আলীকে নিরস্ত্র করা হয়। রাতেই ছুটে আসেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট, গোয়েন্দা শাখাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মনিরুলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর কনস্টেবল কাওসার আলীকে গ্রেফতার করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়েরের পর তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় কাওসার আলী চুপচাপ থাকছেন। তবে সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তিনি অনেকটা ‘অনুতপ্ত’।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার রাত ৩টার দিকে মনিরুলের লাশবাহী গাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়ার বিষ্ণপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সোমবার সকাল ১০টায় গ্রামের ঈদগাহে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং মনিরুলের স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা অংশ নেন। তারাও মনিরুলের ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
পরিবারে শোকের মাতম : মনিরুলের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলে হত্যার খবর শোনার পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা দিলোয়ারা হক। জ্ঞান ফিরলেই খুঁজছেন ছেলেকে। সবার কান্না দেখে ১৭-১৮ মাস বয়সি ছেলে তাহাড়া হক তাকিও বাবার কফিন ধরে চিৎকার করে কাঁদছিল। তবে সে বুঝে উঠতে পারেনি তার বাবা আর এ দুনিয়ায় নেই।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মনিরুলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন স্ত্রী তানিয়া সুলতানা তন্বী। দুজন নারী তন্বীর মাথায় পানি ঢালছেন। ছেলে তাকির চিৎকারে সংজ্ঞা ফিরে তন্বীর। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীরে যেভাবে হত্যা করেছে, তাকেও এভাবে মারা হোক। আমার স্বামীকে যতটুকু কষ্ট দিয়ে মারছে, তারেও এভাবে কষ্ট দিয়ে মারা হোক। আমি এর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার সন্তানের কী অইবো। আমার সন্তানরে কে দেখাবো?’ বলতে বলতে তিনি আবারও জ্ঞান হারান। আরেক কক্ষে বিলাপ করছেন মনিরুলের বোন আফরোজা আক্তার, মাহমুদা হাসান ও মাকসুদা আক্তার। তারা বলেন, ‘আমার ভাইয়েরে এভাবে মারল কেন? সে তো মানুষের জীবন বাঁচাতে চাকরিতে গেছে, তারে মারল কেন? আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’ মনিরুল ইসলাম ওই উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক মাস্টারের ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, সহকর্মী কাওসার আলীর গুলিতে কনস্টেবল মনিরুল হক নিহতের ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং বিস্তারিত অনুসন্ধানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তিন সদস্যের কমিটি করেছেন। কমিটিতে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীমকে আহ্বায়ক, ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. এলিন চৌধুরীকে সদস্যসচিব এবং ডিএমপির আইএডি বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আশফাক আহমেদকে সদস্য করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কাওসার আলী মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করছে তার পরিবার। সবকিছু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর জানে বলেও দাবি করে তার পরিবার। যদিও ডিএমপি বলছে, এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি পরিবারের পক্ষ থেকে।
ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলছেন, কাওসারের মানসিক ভারসাম্যের তথ্য জানত না ডিএমপি। ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে কাওসার বিরক্ত ছিল বলে রিমান্ডে তিনি জানিয়েছেন। তবে তদন্তেই বের হয়ে আসবে এ ঘটনার মূল কারণ। গ্রেফতার পুলিশ সদস্য কাওসার আলী ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশে যোগদান করেন। ২৩ মাস ধরে তিনি গুলশানের ডিপ্লোমেটিক জোনে কাজ করছিলেন।