ভাটারায় জাপান প্রবাসী যুবকের লাশ উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৯ পিএম, ২ জুন,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:৫৫ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আরিফুল ইসলাম জাপান প্রবাসী, আর পারভীন আক্তার থাকেন কানাডায়। তারা স্বামী-স্ত্রী। কিছুদিনের জন্য রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন তারা। ১৫ দিন পর গতকাল শনিবার স্বামী আরিফুল ইসলামের (২৮) লাশ মিলল ওই ঘরে। আর তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তার পালিয়েছেন। পুলিশ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বুকে ও গলায় ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ পচে-গলে গেছে।
মৃতদেহের পাশ থেকে হাতে লেখা একটি চিরকুট ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে, যেটি আরিফুল ও পারভীনের নোটারি করা বিয়ের হলফনামা। পুলিশের ধারণা, আরিফুলকে হত্যার পর পারভীন কানাডায় চলে গেছেন। আরিফুল জাপান প্রবাসী ছিলেন। চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে এই রেপিস্ট। ব্লাকমেইলার সে। তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে এই রেপিস্ট ব্লাকমেইলারকে মেরে শান্তি নিলাম।’
গতকাল রাতে ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মাটি প্রপার্টিজের দোতলা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরিফুলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। নিহত আরিফুলের বাবার নাম শাজাহান শিকদার। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার কালিকুর পাড়ায়।
পুলিশ জানিয়েছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের এক নম্বর ভবনটি মাটি প্রপার্টিজের। সেখানে দেশি-বিদেশি নাগরিকরা অল্প দিনের জন্য অনলাইনে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন। গত ১৭ মে আরিফুল ও পারভীন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অনলাইনের মাধ্যমে দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেন। গতকাল বিকেলে ভবনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ঝাড়ু দেওয়ার জন্য দরজা ধাক্কা দেন। ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খোলেন। এরপরই দুর্গন্ধ পান এবং দরজার সামনে দাঁড়িয়ে খাটে একজনকে শোয়া অবস্থায় দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করে। লাশের বুক ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ।
তাতে দেখা গেছে, ১৭ মে বিকেল ৪টা ৯ মিনিটে আরিফুল ও পারভীন অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করছেন। দু’জনের মুখেই মাস্ক। আরিফুলের হাতে একটি লাগেজ। ১৮ মে ভোর ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন আক্তার বাসা থেকে একা বেরিয়ে যাচ্ছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, বাসায় ওঠার পর ওই রাতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আরিফুল জাপানে থাকতেন। সেখানেই এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আয়েশা (জাপানি নাম নাচুকি) নামের ওই তরুণীর সঙ্গে বছরখানেক আগে জাপানে বিয়ে করেন তিনি। তবে কানাডা প্রবাসী পারভীনের সঙ্গে আরিফুলের প্রেমের সম্পর্ক থাকার কথা শুনেছিল পরিবার। পারভীনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল কিনা তা পরিবার জানে না। লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া নোটারি করা বিবাহের হলফনামায় দেখা যায়, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর নরসিংদীতে পারভীন ও আরিফুল বিয়ে করেছেন।
আরিফুলের দেশে আসার বিষয়টি পরিবার জানত না। গতকাল সকালে জাপান থেকে আরিফুলের স্ত্রী আয়েশা ফোন করে (আরিফুলের) দেশে আসার কথা জানিয়েছেন। এরপর থেকে পরিবার আরিফুলের সন্ধান শুরু করে। রাতে পুলিশের কাছ থেকে আরিফুলের খুন হওয়ার খবর পান তারা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পারভীন ১৭ মে কানাডা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে নামেন। পরদিন সর্বশেষ তাঁর ফোনের অবস্থান ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এতেই ধারণা করা হচ্ছে, আরিফুলকে হত্যার পর পারভীন কানাডায় ফিরে গেছেন।
ভাটারা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। ধারণা করছি, আরিফুলকে হত্যা করে তাঁর স্ত্রী কানাডা ফিরে গেছেন। ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।