২০৩০ সালে সাড়ে ৫২ লাখ যাত্রী বহন করবে মেট্রোরেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৩ এএম, ২০ মে,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:৫২ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
মেট্রোরেল চালু হওয়ার আগে রাজধানীর রাস্তায় ঘণ্টায় যানবাহনের গতি ছিল চার দশমিক আট কিলোমিটার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কিলোমিটারে। কমেছে নগরীর কার্বন নিঃসরণ। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৪০ কিলোমিটার পথ আসবে ছয়টি মেট্রো রেলের আওতায়। তখন দৈনিক প্রায় ৫২ লক্ষ ৪০ হাজার যাত্রী দ্রুত, নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে মেট্রেতে যাতায়াত করতে পারবে।
এদিকে মেট্রো-৬ প্রকল্পটি উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার বর্ধিত করা হয়েছে। এতে স্টেশন থাকবে পাঁচটি। পুরো কাজ শেষ হলে মেট্রো-৬ তে নতুন আরো চারলাখ যাত্রী যোগ হবে। বর্তমানে মেট্রো রেলে তিন লাখ যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং সেমিনার অন ঢাকা মেট্রোরেল’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মেট্রোরেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ জানিয়েছি।
পৃথিবীর কোন দেশে মেট্রোরেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে এমন প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের মেট্রোরেলেও ভ্যাট নেই। তাহলে আমরা কেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসাব?’ মেট্রো রেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত ভুল।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল আমাদের সম্পদ। ২০৩০ সালে ছয়টি এমআরটি লাইনের কাজ শেষ হবে।
রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলোর গরিব চেহারা দেখে লজ্জা লাগে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এত গরিব গরিব চেহারা আমাদের বাসের! আফ্রিকার দেশের রাজধানী শহরেও এর চেয়ে ভালো বাস চলে। এই শহরে এত দামি গাড়ি চলে, কিন্তু বাসের অবস্থা এত খারাপ কেন! বারবার কথাবার্তা বলেও সমাধান করা যায়নি। এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। আমাদের মালিক সাহেবরা কি বিদেশ যান না, দেখেন না! বাসের অবস্থা দেখলে লজ্জা লাগে।
ব্র্যান্ডিং সেমিনারে অতিথিদের আমন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামনে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা বেশির ভাগই আমাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। কিন্তু যাঁদের কাছে ব্র্যান্ডিংয়ের দরকার, তাঁরা নেই। তিন লাখ যাত্রী প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল আসছেন। মতিঝিল থেকে উত্তরা যাচ্ছেন। এখানে তাঁদের কাউকে রাখা দরকার ছিল।
তিনি বলেন, ইকনোমিস্টের সমীক্ষা অনুযায়ী বাসযোগ্য নগরীর তালিকায় ঢাকার অবস্থা খুবই খারাপ। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে বসবাসযোগ্য সিটির অবস্থা মিলে না। ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরীর তকমা থেকে মুক্তি পেতে হবে। বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলি নদীর অবস্থা খুবই খারাপ। এই শহর ও মানুষকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
স্বাগত বক্তব্যে ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম, এ, এন, ছিদ্দিক বলেন, বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মেট্রো রেলের মতো প্রকল্পে শত টাকা বিণিয়োগ করলে ৩০০টাকা লাভ করা সম্ভব। তিনি বলেন, অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছিলাম। পুরো অর্থ পেলে সবকিছু ভালোভাবে চলবে। তিন কিস্তিতে মেট্রো রেলের জন্য আনা ঋণের ৭৫ কোটি টাকা পরিশোধের কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকদফা বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। মেট্রোর টিকিটে এক জুলাই থেকে ১৫ ভাগ ভ্যাট যুক্ত করার কথা বলছে এনবিআর। বিদ্যুৎ ও ভ্যাটের কারণে বাড়তি ব্যয় যাত্রীদের থেকে আদায় না হলে মেট্রো রেলের স্বাভাবিক গতির ছন্দপতন ঘটবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মেট্রো রেল এখন বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশে^ ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। অযথা হর্ন না বাজানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণে শিশু সহ জনস্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে। হর্ন না বাজিয়ে গাড়ি চালিয়েও আমরা দুনিয়াজুড়ে নতুন করে পরিচিত হতে চাই। সকল পরিবহনের জন্য একটি স্মার্ট কার্ড তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্কে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা দরকার। পার্কটি আমাদের ফিরিয়ে দিন। সবুজায়ন করব। যেন শিশুরা খেলতে পারে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি, জাইকার বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিদে, এমআরটি লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক মো: আফতাবউদ্দিন প্রমুখ।