বঙ্গবাজারে দশতলা মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু শিগগিরই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৯ এএম, ১৭ এপ্রিল,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:২৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বঙ্গবাজারে খুব শিগগিরই শুরু হচ্ছে ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দশতলা মার্কেটের নির্মাণ কাজ। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘আধুনিক বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’।
চলতি মাসের যেকোনো দিন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে। মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সোমবার থেকে চলছে বঙ্গবাজারে অস্থায়ী স্থাপনা অপসারণের কাজ। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বুধবারের মধ্যে সম্পন্ন হবে অস্থায়ী স্থাপনা অপসারণ।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, বুলডোজার দিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে বঙ্গবাজারের অস্থায়ী স্থাপনা। তা দেখভাল করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের কাঠ-বাঁশ, জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। আগে থেকে না জানিয়েই দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। তবে ব্যবসায়ী সমিতি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের দোকানপাট অপসারণের কথা জানিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা গেছে- একটি বড় নোটিশ বোর্ডে লেখা রয়েছে- আধুনিক বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ঈদুল ফিতরের পর বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতানের নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপণিবিতানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সেই লক্ষ্যে ঈদুল ফিতরের পর বিপণিবিতানের সব ধরনের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অস্থায়ী দোকান না সরিয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ঈদের পরে বঙ্গবাজারে অস্থায়ী দোকান পেতে বসেন। এই অবস্থায় সোমবার থেকে এসব অস্থায়ী দোকানপাট অপসারাণের কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, দ্রুত দশতলা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যেই অস্থায়ী দোকানগুলো ভাঙা হয়েছে। তার দাবি, বহুতল ভবন নির্মাণের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাই যেন এসব দোকানের পজিশন বরাদ্দ পান। সাব্বির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দাবি, আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরই যেন নতুন ভবনে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ছাড়া বাইরের কেউ যাতে এসব দোকানে ভাগ না বসাতে পারে।
সোহেল আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন। এরপর ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে পোড়া বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে চৌকি পেতে বসেন তারা। তাছাড়া অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই বলা হয়, পোড়া বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র বলছে, আধুনিক মার্কেট নির্মাণের লক্ষ্যে টেন্ডার, নকশা প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠকও করেন মেয়র। প্রধানমন্ত্রী মার্কেট নির্মাণে সম্মতি দেন। এখানকার ব্যবসায়ীদের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়ার লক্ষ্যে সব কার্যক্রম শেষে খুব শিগগিরই শুরু হচ্ছে মার্কেট নির্মাণের কাজ।
বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এই অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙার কথা ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসের যে কোনো দিন বঙ্গবাজারে বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় দেওয়ার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই কাজগুলো এগিয়ে রাখা হচ্ছে।
বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। আগুনে পোড়ার পর কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ অনেকের। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য যে অনুদান রয়েছে, তা শিগগিরই তাদের হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবাজারে মার্কেট নির্মাণের জন্য ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এটি নির্মাণ করবে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা কাজও শুরু করেছে। তিনি বলেন, উচ্ছেদ নয়, এখানকার অস্থায়ী স্থাপনা অপসারণ করা হচ্ছে। বুধবারের মধ্যে অপসারণ কাজ সম্পন্ন হবে আশা রাখি।
ডিএসসিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০ তলা আধুনিক এই ভবনে থাকবে বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোর। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি ও সপ্তম তলায় ৩১৩টি দোকান থাকবে। এ ছাড়া অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা রাখা হবে। ভবনের পার্কিংয়ে একসঙ্গে প্রায় ১৮৫টি গাড়ি ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ভবনটিতে ২২টি খাবারের দোকান রাখা হবে। সেই সঙ্গে নকশায় আরও ৮১টির বেশি দোকান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট।
গত বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয় রাজধানীর সবচেয়ে পুরোনো পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ৪ হাজারের মতো ব্যবসায়ী।