চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইয়ে পাচার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:১০ পিএম, ২৪ মার্চ,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৩৪ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
রাজধানীর ডেমরায় এক কিশোরীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইয়ে পাচার ও নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। গ্রেপ্তার আসামির হলেন, ফারজানা (৩৫) এবং সোহাগী ওরফে রিয়া (৩০)।
গতকাল শনিবার রাতে (২৩ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসামিদের পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে আসছিল।
জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগীকে দুবাইপ্রবাসী ফারজানা ও তার বোন সোহাগী মিলে দুবাইতে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে অবস্থানকালীন ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাতের মৃত্যু হয়। দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দুবাইপ্রবাসী একজন বাঙালি মেয়েটির মরদেহ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গত বছরের ২৪ নভেম্বর ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেন। ওই পোস্টের দুদিন পর ২৬ নভেম্বর মেয়েটির পরিবার জানতে পারে, দুবাইয়ে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। পরে মরদেহ দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয় এবং মেয়েটির বাবা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে ২৮ নভেম্বর মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার ও হত্যার অভিযোগে একটি নালিশি মামলা করেন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, জান্নাতের পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসামিদের পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। জান্নাতের পিতা জাহাঙ্গীর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে এবং তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। এভাবে টানাপোড়েন এর সংসারে অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকা অবস্থায় ভিকটিম জান্নাতকে তাদের প্রতিবেশী সোহাগী ও তার দুবাই প্রবাসী বোন ফারজানা দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। দুবাই প্রবাসী ফারজানা ভিকটিমকে জানায় যে, তাকে দুবাই নিয়ে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ পাইয়ে দিবে। যার মাধ্যমে অনেক ভালো বেতন এবং ভাতাসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পাবে যাতে করে জান্নাত এর পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার খরচের কথা বলে ফারজানা ও সোহাগী জান্নাত এর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা যোগাড় করে দিতে বলে। বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম জান্নাত তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে এবং লোনের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা যোগাড় করে সোহাগীর হাতে তুলে দেয়।
র্যাব জানায়, পরবর্তীতে ফারজানার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী সোহাগী তাদের চক্রের দালালের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের একটি ভুয়া ঠিকানা সম্বলিত পাসপোর্ট ও টুরিস্ট ভিসা প্রস্তুত করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট জান্নাতকে তারা দুবাই প্রেরণ করে। দুবাই পৌঁছানোর দুদিন পর জান্নাত তার বাবা জাহাঙ্গীরকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় যে, আসামিরা দুবাইতে উচ্চ বেতনের চাকরির মিথ্যা প্রলোভন ও আশ্বাস দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচারের আগেই বিক্রি করে দিয়েছে এবং সেখানে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌনকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত আসামি ফারজানা গত বছর মার্চ মাসে দুবাই গিয়েছিল এবং জান্নাত মারা যাওয়ার পর জানুয়ারি ২০২৪ মাসে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরেই তার বোন সোহাগীকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত রাতে র্যাব-৩ এর হাতে তারা গ্রেপ্তার হয়।