দোকানমালিকদের অর্থেই হবে বঙ্গবাজারে ১০ তলা ভবন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ১৪ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:৪৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
পাইকারি কাপড়ের অন্যতম বড় আড়ত রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গত বছরের ৪ এপ্রিল। আগুনের লেলিহান শিখায় চারটি মার্কেটের পাঁচ হাজার দোকান ভস্মীভূত হয়। এতে পুড়ে ছাই হয়েছে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন ও কর্মচারীদের জীবিকার অবলম্বন।
ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে। ক্ষতির আড়ালে দায় লুকিয়েছে সবাই। এখন পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনার দায় নেয়নি ব্যবসায়ী, দোকান মালিক সমিতি বা সিটি করপোরেশনের কেউই। এ ছাড়া ছিল ব্যবসায়ীদের অবহেলা ও কোনও ঝুঁকি বিমাও ছিল না মার্কেটে।
তবে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে এবার ১০ তলাবিশিষ্ট বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু ১০৬ কাঠা জমির ওপর ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া এ ভবনের খরচ নেওয়া হবে দোকানমালিকদের কাছ থেকে।
আগামী এপ্রিলে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এর নাম হবে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’। নতুন এই মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকানমালিক সমিতি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, নির্মিতব্য বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতানে দোকানসংখ্যা হবে ৩ হাজার ২১৫টি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থাসহ আধুনিক মার্কেটের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতানের নকশা প্রণয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করবে ডিএসসিসি। ঈদের পর এপ্রিলেই এ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। নকশা অনুযায়ী ভবনটি তৈরি করতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা। ১০৬ কাঠা জমির ওপর বেজমেন্টসহ ১০ তলা এই বিপণিবিতানের নির্মাণ ব্যয়ের পুরো টাকা দোকানমালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হবে।
ডিএসসিসির মার্কেট নির্মাণ সেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তৌহিদ সিরাজ জানান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড, ডিপিএম ও রিফ্লেকশন অ্যান্ড ডিজাইন নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান নতুন ভবনের প্রাথমিক নকশা করেছে। এরপর দোকান মালিক সমিতি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত নকশা করা হয়েছে। চূড়ান্ত নকশা অনুযায়ী দরপত্র আহ্বানের প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে প্রতিটি দোকান ছিল ১৭ থেকে ২৪ বর্গফুটের মধ্যে। এ দোকানগুলো সে সময়ে দুই লাখ টাকায় বরাদ্দ দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। তবে নকশা অনুযায়ী নতুন নির্মিতব্য মার্কেটে দোকানের আকার হবে ৮০ থেকে ১২০ বর্গফুট। এ কারণে দোকান বরাদ্দ পেতে আগ্রহীদের কমবেশি ২০ লাখ টাকা সিটি করপোরেশনের তহবিলে জমা দিতে হবে। তবে এ টাকা পাঁচ কিস্তিতে দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেট উপ-আইন ২০১৬ অনুযায়ী নবনির্মিত এ মার্কেটে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির কর্তাব্যক্তিরা। ডিএসসিসির হিসাবমতে, পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে ২ হাজার ৯৬১টি দোকান ছিল। নতুন মার্কেটে ৩ হাজার ২১৫টি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার সময় বৈধ বরাদ্দপত্র ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপস্থাপন সাপেক্ষে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেবো। এরপর বাকি দোকান নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে হবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া দোকান বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রিম প্রায় ২০ লাখ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ২০ লাখ টাকা দিয়ে আবার দোকান বরাদ্দ নেওয়া কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের হিসাবের বাইরেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আছেন, যাদের বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মিটিং করে জানিয়েছে। তবে অনেক ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আরও দাবিদাওয়া থাকতে পারে। তবে আমরা চাই কাজটি যেন দ্রুত শেষ হয় এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যেন অগ্রাধিকার পান।