২৫ স্থানে গরুর মাংস মিলবে বাজারের চেয়ে কম দামে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৬ পিএম, ১১ মার্চ,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:৫৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বিলাসী পণ্য। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার কথা বললেও কিছুতেই নিত্যপণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না। বরং বিভিন্ন ছুতোয় মুনাফা লোটার চেষ্টায় তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। তবে রমজানে ভোক্তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কয়েকটি নিত্যপণ্য তুলনামূলক কম দামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এবারের রমজানে রাজধানীর ২৫টি স্থানে পিকআপ কুলভ্যানে বাজার দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি হবে গরুর মাংস, দুধ, ডিম, মাছ। এছাড়াও রাজধানীর ৫টি স্থানে স্থায়ী দোকানেও মিলবে দুধ, ডিম ও মাংস। প্রতিদিন সকাল ৯টায় প্রাণিজাত এসব পণ্য নিয়ে কুলভ্যানগুলো পৌঁছে যাবে নির্ধারিত স্থানে। সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে বিক্রি। যতক্ষণ পর্যন্ত পণ্য থাকবে ততক্ষণই বিক্রি কার্যক্রম চলবে। প্রথম রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত এসব পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলবে।
রবিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর খামারবাড়িতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রাঙ্গণে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।
রাজধানীর যে ২৫টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ পিকআপ কুলভ্যানে সুলভে এসব পণ্য বিক্রি হবে সেগুলো হলো–নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (সেকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর-১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার), কাকরাইল।
স্থায়ী ৫টি বাজার হচ্ছে– মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর ও কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে এবার গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হবে। এছাড়া দুই সিটির পাঁচ জায়গায় অস্থায়ী দোকানে ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস ও আট জায়গায় সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রি হবে। গরু, খাসি, মুরগির মাংস এক কেজি করে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
এছাড়া রমজান মাসে বাজারে মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য সহনীয় রাখতে মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪টি নির্ধারিত স্থানে মাছ বিক্রি করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১. বঙ্গবন্ধু চত্বর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট; ২. মিরপুর-১ (ঈদগাহ মাঠ); ৩. সেগুনবাগিচা বাজার ও ৪. মেরুল বাড্ডা বাজার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১. মুগদাপাড়া (মদিনাবাগ বাজার), ২. যাত্রাবাড়ী (দয়াল ভরসা মার্কেট), ৩. মতিঝিল (বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নার) ও ৪. পলাশী মোড়ে এ কর্মসূচি পরিচালিত হবে।
রুই মাছ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান এসব পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় বলেন, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কেউ ভাত ও মাছের কষ্ট পাবেন না। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটার প্রভাব বাজারে পড়বে। কার্যক্রমটি তদারকি ও মনিটরিং করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
উল্লেখ্য, গত রমজানেও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০ টাকা ও ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সরকারের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, নিঃসন্দেহে এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু শুধু রমজানে নয়, এ উদ্যোগ সারা বছর কার্যকর রাখলে বাজারে আমরা এর ইতিবাচক প্রতিফলন পেতাম। এছাড়া একজন ক্রেতাকে মাত্র এক কেজি নয়, পরিমাণটা আরও কিছুটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ২ কেজি করা হোক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান আহমেদ জানিয়েছেন, সারা বছরই ক্রেতারা আমাদের কাছে এসে দুধ, ডিম, মাংস কেনেন। কিন্তু রমজানের সময় ক্রেতার কাছে গিয়ে পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে চাই। করোনা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী ডিম, দুধ, মাংস সরবরাহ দিয়ে সরকারের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগে শামিল হতে চাই।
তিনি জানান, রমজানের সময় আমরা নিম্ন আয়ের মানুষদের পাশে থাকতে চাই। রমজানে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা করে সেই অপবাদ আর নয়। বিশ্বের অনেক দেশের মতোই ধর্মীয় উৎসবগুলোয় আমরাও সাধারণ মানুষের আনন্দে শরিক হতে চাই।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারের এই কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। সাধারণ মানুষের পাশে থাকার এই সুযোগ আমরা প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রহণ করতে চাই।