আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীরা বেশি দুর্নীতির শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৬ পিএম, ২৯ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৩৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকে। এছাড়া লাইসেন্স নেয়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস সেবা ও কর দেয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২’ শীর্ষক এক উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে আসে।
আজ রবিবার ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা বিষয়ক পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিভিন্ন সেক্টর ও কোম্পানির ৭৪ জন সিনিয়র ব্যবসায়ীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রেহ মাধ্যমে ওই জরিপকাজ পরিচালনা করা হয়েছে। যার মধ্যে বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদোক্তাদেরও তথ্য-উপাত্ত নেয়া হয়েছে।
গোলাম মোয়াজ্জেম তার উপস্থাপনায় বলেন, দুর্নীতির কারণে শুধু উৎপাদন খরচ নয়, সেবার মূল্যও অনেকখানি বেড়ে যায়। এই মূল্যের ঘানিটা সাধারণ মানুষেরই ওপর পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলে শুধু ব্যবসার পরিবেশ নয়, অর্থনৈতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোন কোন খাতগুলোতে দুর্নীতি হচ্ছে?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা, সেটা সব ধরনের ব্যবসায়ীরা বলেছেন। যেসব খাতগুলো এসেছে; তার মধ্যে ৪৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন কর দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ৫৪ শতাংশ বলছেন লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলছেন ৪৯ শতাংশ এবং আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলছেন ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী।
অনুষ্ঠানে সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সারাবিশ্ব এখন একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ। যার মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার পাশাপাশি বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত মন্দাভাব থাকবে। এটা থেকে উত্তরণ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এসব কারণে বাংলাদেশের মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ওই সব মূল্যস্ফীতির কারণে হাবুডুবু খাচ্ছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ও ব্যবসায়ীরা এক ধরনের চাপে রয়েছে। ২০২২-এর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত যে জরিপকাজ হয়েছে। ওই সময়ের পরে আগস্ট, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বেশকিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এর ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাবে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানের যে চেষ্টা রয়েছে, তা কমে আরও বাড়বে। এর পাশাপাশি রফতানিকারক শিল্পগুলো উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।
ফাহমিদা আরও বলেন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে রফতানি সক্ষমতা কমে এলে বড় একটি প্রভাব পড়বে রফতানিখাতে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এমনিতেই কমার দিকে, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জরিপে যেসব সূচকের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম সূচক রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে শুধু উৎপাদন খরচ নয়, সেবার মূল্যও অনেকখানি বেড়ে যায়।
জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনায় গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পায় না। এক্ষেত্রে সুদের হার কমিয়ে দেয়া দরকার। পুঁজিবাজার আগের মতোই দুর্বলতা রয়েছে। আর্থিক খাতে সুশাসন আনার ক্ষেত্রে সরকার যে আশ্বাস দিয়েছে, বিশেষ করে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইএমএফের সঙ্গে সরকার সুশাসনের যে কথা দিয়েছে সেখান থেকে কাজ শুরু হতে পারে। সেখানে আর্থিক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে ঋণ খেলাপিদের কমিয়ে আনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এফডিআই অর্থ্যাৎ বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে আমরা সেরকম সম্ভাবনা দেখছি না। বিদেশি বিনিয়োগ সমানভাবে আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কর কাঠামো সংক্রান্ত জটিলতা, অবকাঠামোগত ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক দুর্বলতা ও দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারছি না। আমাদের দেশের নীতি কাঠামো যখন করা হয় তখন সবার জন্য করা হয়। কিন্তু ছোট, মাঝারি ও বড়দের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নীতি দরকার। খাত ও আকারভিত্তিক উদ্যোগ দরকার। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থঋণ আদালতের সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে বন্দর সুবিধাগুলোর বিষয়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ী অদক্ষ মনে করে। যা আমাদের জরিপে এসেছে।