ঢাকায় পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নামছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বিশেষজ্ঞরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৪ পিএম, ২ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:০০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশে প্রতিনিয়তই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বরেন্দ্র এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে পানির স্তর নামছে। এদিকে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে বাড়ছে নানা পানিবাহিত রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি ও সাড়ে ৭ কোটি মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থায় আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে রাউন্ড টেবিল ডিসকাশন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এনজিও ফোরাম, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রেসি ফোরাম ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে এর আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, ব্যাপক পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে ঢাকার পাশাপাশি বরেন্দ্র এলাকার অনেক জায়গায় পানির স্তর স্থায়ীভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানি তোলা ছাড়াও অন্যান্য কিছু ইস্যু রয়েছে। সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয়। সেক্ষেত্রে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের পর থেকে এসব এলাকায় নতুন কোনো টিউবওয়েল বসানোর অনুমতি দিচ্ছে না। ঢাকা ও বরেন্দ্র এলাকার বাইরেও বিভিন্ন নগর এলাকা ও শিল্পাঞ্চল এলাকায় পানির লেয়ার নেমে যাচ্ছে।
বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী এবং বুড়িগঙ্গার পানিকে এখনো পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ করতে পারিনি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করতে হলে একটি জেলাকে নিয়ে ভাবলে হবে না। ঢাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় এখান থেকে পানি তোলাই কঠিন হয়ে যাবে। এগুলো আমাদের ভাবতে হবে। সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, যে পানিটা মানুষ ব্যবহার করবে, সেটি যেন দূষণমুক্ত হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে যে পানি ব্যবহার হয়, তাও কিন্তু রিসাইকল করা হয় না। করা হলে অনেকটা পানির সংকট সমাধান হতো। এ জন্য আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। ডা. আজিজ বলেন, ঢাকায় পানির সমস্যা বেশি। চট্টগ্রাম ও খুলনা ভালো করছে। যে মানুষকে আমরা সার্ভিস দিচ্ছি, তিনি আমার-আপনার প্রতিবেশী। আমাদেরই কাছের মানুষ। এই বিবেচনায় সেবা প্রধানে আন্তরিকতা বজায় রাখতে পারি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিরেক্টর আনোয়ার জাহিদ বলেন, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হলে আমাদের ভাবতে হয় সবার জন্য পানি আছে কি না। ৯৭ ভাগ লবণপানি, ৩ ভাগ বরফ ও ১ ভাগেরও কম পানযোগ্য পানি। এর থেকেই খাবার পানি। বর্তমানে পানির চাহিদা প্রচুর বাড়ছে তবে পরিমাণ বাড়ছে না। ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ কমে আসছে।
তিনি বলেন, ঢাকায় যেখানে ৫০ বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ২ থেকে ৩ মিটারের মধ্যে ছিল, বর্তমানে সেখানে ৮৬ মিটারে নেমে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই এলার্মিং। তবে কিছু কিছু এলাকায় বোরো মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নামলেও আবার বৃষ্টির সময়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির লেয়ার শুধু নামছেই, কখনো আর উপরে উঠছে না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় পানির লেয়ার সবচেয়ে বেশি নিচে। ঢাকায় বছরে এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে সেন্টিমিটার হারে নামছে। তবে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, ব্যবহারযোগ্য পানি আছে কি না, কতো পরিমাণ আছে, এসব বিষয় দেখার মতো কেউ নেই।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রেসি ফোরামের সদস্য ও এনজিও ফোরামের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এসএসও রশিদ, কাজী মনির মোশাররফ, খুলনা ওয়াসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম, রাজশাহী ওয়াসার ডেপুটি ম্যানাজার এসএম তুহিনুর আলমসহ আরও অনেকে।