যুবলীগ নেতাকর্মীদের দখলে ঢাবির হল : ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৩ পিএম, ১১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩১ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ যুবলীগ আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে জড়ো হয়েছেন। রাজধানীর বাইরে থেকে আসা এসব নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের আশেপাশে এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছিলেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও খুব সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের দিকে আসতে থাকেন। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। সমাবেশস্থলের পাশেই অবস্থিত স্বনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস সকাল থেকে ছিল যুবলীগ নেতাকর্মীদের দখলে। ঢাবির প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যুবলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। তবে সমাবেশের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন ঢাবির হলগুলোতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা বিশ্রাম, গোসল ও খাওয়া দাওয়া সারতে ঢাবির হলগুলোতে আসতে থাকে। এতে ওয়াশরুমগুলোতে পড়ে যায় দীর্ঘ লাইন। নেতাকর্মীদের ভিড়ে সেখানে সুযোগ পাচ্ছিলেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পবিত্র জুমাবার হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ে বহুগুণ। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে হলগুলোর ক্যান্টিন ও খাবারের দোকানও চলে যায় সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের দখলে। সেখানে রং-বেরংয়ের টি-শার্ট পরিহিত যুবলীগকর্মীদের বাইরে হট্টগোলে সুবিধা করতে পারছিলেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি ক্যান্টিনে আবার সংগঠনটির নেতাকর্মীরা আগেই খাবারের বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। এতে শিক্ষার্থীদের খাবার না দিয়ে সেগুলো প্রস্তুতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে ক্যান্টিন সংশ্লিষ্টদের। কয়েকটি হলের ক্যান্টিনে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও খাবার না পেয়ে ফিরে আসতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। এদিকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মাঠ যেন বাস টার্মিনালে পরিণত হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গাড়িগুলো হলের মাঠে পার্কিং করা হয়। এছাড়া সকাল থেকে যুবলীগ নেতাকর্মীদের বাজানো গান-বাজনার কারণে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো জায়গায় নামাজের সময়ও চলে গান-বাজনা। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে এসেও তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে খেয়েছেন। খাবার খাওয়ার পর প্যাকেটগুলো তারা ডাস্টবিনে না ফেলে যত্রতত্র ফেলে রেখেছেন। ঢাবির মল চত্বর, সবুজ চত্বর ও ইন্টারন্যাশনাল হলের সামনেসহ পুরো ক্যাম্পাস এক প্রকার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ওয়াশরুমে ভোর থেকে এত বেশি ভিড় ছিল যে ঘুম থেকে উঠে সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হতেই আধা ঘণ্টা চলে যায়। আর জুমার নামাজের পর খাবারের দোকানে গিয়ে দেখি খাবার শেষ। এমনকি ক্যান্টিন ও দোকানে কোথাও খাবার নেই। এ ধরনের বাজে অভিজ্ঞতা হল জীবনে এই প্রথম।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, মনে হচ্ছে হল যেন যুবলীগের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। পুরো মাঠ গাড়িতে ভর্তি, খেলার কোনো জায়গা নেই। যুবলীগের নেতাকর্মীদের জন্য আমরা গোসল-খাওয়া কোনোটাই ভালোভাবে করতে পারিনি। অনেক শিক্ষার্থী খাবার না পেয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করেছেন। একাধিক হল প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই বলে জানান। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, যুবলীগ নেতারা সমাবেশে আসা কর্মীদের আগে থেকেই বিশ্রাম খাবার ও যাবতীয় কাজে ঢাবির হলগুলোতে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাদের যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় সেসব দেখভালের দায়িত্ব ছিলেন হল ছাত্রলীগ নেতারা। ফলে সমাবেশে যোগ দিতে আসা যুবলীগ নেতাকর্মীরা পুরো দিন নির্বিঘেœ ঢাবির হলগুলো ব্যবহার করতে পেরেছেন।