বাসাভাড়া বাড়াতে মরিয়া মালিকরা, দিশেহারা ভাড়াটিয়ারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ১৪ আগস্ট,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৮ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেলের দাম ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বাসাভাড়া বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাড়ির মালিকরা। অনেক বাড়ির মালিক এরই মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর নোটিশও টানিয়ে দিয়েছেন। বাড়ির মালিকদের এমন কর্মকান্ডে দিশেহারা ভাড়াটিয়ারা।
তারা জানান, ঢাকায় যারা ভাড়া বাসায় থাকে তাদের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবার। করোনা পরবর্তী সময়ে তারা বাসাভাড়া দিয়ে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে অমানবিকভাবে বাসাভাড়া বাড়ানো শুরু করছেন বাড়ির মালিকরা। তাদের ওপর সরকারের কোনো সংস্থারও নিয়ন্ত্রণ নেই। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মারা যাবেন ভাড়াটিয়ারা। অবিলম্বে বাড়ির মালিকদের এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সম্প্রতি ঢাকার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর উত্তর দনিয়ার ৪৮৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন বাড়ির মালিক। এমন নোটিশ দেখে হতভম্ব ভাড়াটিয়ারা। ওই নোটিশে বলা হয়, সম্মানিত ভাড়াটিয়া সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আপনাদের বসবাসকৃত ফ্ল্যাটটির ভাড়া আগামী ০১-১০-২০২২ হতে ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হলো। যদি আপনারা এই বর্ধিত ভাড়ায় থাকতে না চান তাহলে আমাদের ম্যানেজার সাহেবকে আগামী ৩১-০৮-২০২২ তারিখের মধ্যে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদান্তে, মালিক পক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক ভাড়াটিয়া বলেন, সাততলা এই বাড়িটিতে মোট ২৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাড়ির নাম ‘শেখ মঞ্জিল’। বাড়িটির সবকটি ফ্ল্যাটে চাকরিজীবী এবং মধ্যবিত্ত লোকজন ভাড়া থাকেন। সম্প্রতি তেলের দাম বাড়ানোর পর হুট করে বাসা বা ফ্ল্যাটভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাড়ি মালিকের এমন কর্মকান্ড দেখে সব ভাড়াটিয়া অবাক হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর এমনিতেই জীবনযাত্রার ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। মাস শেষে ধার করে সংসার চালাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বাসাভাড়া বাড়ানো ডাকাতির শামিল। ওই বাড়ির মালিক অন্বেষা গ্রুপ। তবে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে মালিক পক্ষের কারও যোগাযোগ নেই। বাড়িটি পরিচালনা করেন ব্যবস্থাপক মো. হানিফ।
তিনি বলেন, তাদের বাড়ির ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন অনুযায়ী এতদিন ভাড়া কম নেয়া হতো। ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা করা হয়নি। এখন বাড়ির মালিকের নির্দেশেই ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার লালবাগের চারতলা বাড়িতে পরিবার নিয়ে বাস করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফ হোসেন। তার বাড়ির মালিক বাসাভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
আরিফ হোসেন বলেন, এমনিতেই প্রতি বছর জানুয়ারিতে গড়ে ৫০০ টাকা করে বাসাভাড়া বাড়ান বাড়ির মালিক। এখন শুনছি, তার আগেই বাসাভাড়া বাড়ানো হবে। এ নিয়ে বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারাও আতঙ্কে আছেন।
মিরপুর-১০ নম্বরে আটতলা একটা বাড়ির ছয়তলায় ভাড়া থাকেন একটি ওষুধ কোম্পানির চাকরিজীবী আশিকুর রহমান। মাসে সব মিলে বেতন পান ২৮ হাজার টাকা। তিনি জানান, তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকেন, এটির ভাড়া মাসে ১৪ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার খরচ চলতো। এখন যে হারে খাদ্যের দাম বাড়ছে, ধারদেনা করতে হচ্ছে। তারপরও যদি বাসাভাড়া বাড়ানো হয়, তা হলে ঢাকায় থাকা সম্ভব হবে না। দেশের ভাড়াটিয়াদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করে ভাড়াটিয়া পরিষদ। এই পরিষদের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, বাসাভাড়া বাড়াতে বাড়ি মালিকরা অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছেন। এখন ভাড়া বাড়ানো মানে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। বাড়ির মালিকদের এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। তারা যেন বাড়িভাড়া বাড়াতে না পারেন, সরকারকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।