‘তেলের দাম বৃদ্ধিতে সরকার স্বেচ্ছাচারিতা করছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৯ পিএম, ৬ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
কোনো ধরনের গণশুনানি, পূর্বালোচনা ছাড়াই হঠাৎ ঘোষণায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা, অকটেন লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে।
আজ শনিবার (০৬ আগস্ট) ভোররাত ১২টা থেকে এই নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমছে, সেই সময়ে বাংলাদেশে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের একটা ধারাবাহিকতা আছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যখন বেশি ছিল না তখন থেকেই দেশে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল।
তেলের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণের দিক থেকে দেখলে এর জন্য কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকার দাবি করছে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে তেলের দাম বাড়ানো হলো। কারণ, সরকারের পক্ষে আর ভর্তুকি দেয়া সম্ভব না। এই দাবির পেছনে কোনো যুক্তি পাওয়া যায় না।
যুক্তি কেন পাওয়া যায় না সেই ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত কিছু দিনে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বিশ্ব ব্যাপী মন্দার আবহাওয়া তৈরি হওয়ায় তেলের দাম কমে যাচ্ছে। একই কারণে সামনে তেলের দাম আরও কমে যাবে। কাজেই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশে তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক না। দ্বিতীয়ত, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যখন বাড়তি ছিল তখন বিভিন্ন দেশে ভোক্তা পর্যায়ে দাম সহনীয় রাখতে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা এখনো অব্যাহত আছে। সরকার শুল্ক না নিলে দাম অনেকটাই কমে যাওয়ার কথা। তৃতীয়ত, আমরা তো এই হিসাবটা ভুলতে পারি না যে, ২০১৪ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম খুবই কম ছিল তখন দেশে তেলের দাম কমায়নি সরকার। ফলে, তাদের লাভ হয়েছে বেশ বড় অংকের। সরকারি হিসাবেই সেটা প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা। গত কিছু দিনে যদি লোকসানও হয় সেটা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে। তাহলে, কয়েকগুণ বেশি লাভের টাকা তাদের হাতে রয়েছে। তেলের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী তৎপরতার সময় সরকার চাইলে লাভের ওই টাকা থেকে সমন্বয় করতে পারত, এর জন্য তাদের হাতে তহবিল ছিল। এটা বেশি দিন করতেও হতো না, কারণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাচ্ছে।
দেশের অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি পুরোপুরি অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে পরিষ্কারভাবে বলছেন যে, অকটেন ও পেট্রল আমাদেরকে বিশ্ব বাজার থেকে কিনতে হয় না। প্রাকৃতিক গ্যাসের বাই প্রডাক্ট হিসেবে এটা পাওয়া যায় এবং আমাদের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ অকটেন, পেট্রলের মজুদ আছে। তাহলে এর দাম বাড়ানোর তো কোনো প্রশ্নই আসে না। বিশ্ব বাজারের হিসাব এখানে একেবারেই অচল।
তিনি আরও বলেন, একমাত্র ডিজেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা যায়। সেখানেও আমদানি শুল্ক কমিয়ে, বাড়তি তহবিল সমন্বয় করে এর দাম কম রাখার বিকল্প ছিল। সব ধরণের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষের জীবনে এর প্রভাব পরবে। অথচ তা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য সরকারের হাতে বিকল্প ছিল বলে মনে করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর বহুমুখী প্রভাব পরে। যে দাম বাড়ে তারচেয়ে অনেক বেশি চাপ জনগণের ওপর পড়বে। যেমন, যতটা তেলের দাম বাড়বে তারচেয়ে বেশি পরিবহন ব্যয় বাড়বে, পণ্য পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। কিছুদিন ধরে তো দাম বেড়েই চলেছে, সেটা আরেক দফা বাড়বে। যা বহন করার অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ নেই এখন।
তিনি আরও বলেন, এর বাইরে অর্থনীতির ওপরও চাপ পড়বে। বিশেষ করে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা চাপে পড়বেন। এবার বৃষ্টি কম হয়েছে, কৃষককে সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে, ফসল উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে। সরকারের একটা বড় বিকল্প ছিল তেলের ব্যবহার কমানো। সে ধরনের কোনো চেষ্টা সরকার করেনি। আইএমএফের ঋণের শর্তের কারণে তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না, যার জন্য এমন শর্তেও ঋণ নিতে হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যেহেতু বহু জায়গায়, বহু প্রকল্পে বহু ধরনের লিকেজ আছে, প্রচুর দুর্নীতি ও অতি ব্যয় আছে, ফলে সরকার এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে। সরকার এই সংকটের কারণ দূর না করে এর চাপটা জনগণের ওপর দিচ্ছে। এতে করে জনগণের জীবন তো দুর্বিষহ হবেই, অর্থনীতিতেও মন্দার ভাবে চাপ বাড়বে।
আইএমএফের ঋণ বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশ সংকটে পড়ে আইএমএফের ঋণ নিয়ে সমাধানের পথে যেতে পেরেছে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। কারণ, আইএমএফের নিজস্ব একটা ছক আছে। সেই অনুযায়ী, তারা ঋণ দেয় তাদের প্রয়োজন মতো, স্বার্থ মতো, অর্থনীতির একটা নীতিগত কাঠামো পরিবর্তনের জন্য। এর ফলে একটা দেশের ওপর শুধু ঋণের বোঝাই চাপে না, পুরো অর্থনীতির কাঠামোর মধ্যে একটা পরিবর্তন আনে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের ঋণের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো সেবার মূল্য বৃদ্ধি করা ও ভর্তুকি কমানো তাদের অন্যতম এজেন্ডা। তারা চায় এটা বহুজাতিক ব্যবসার একটি অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হোক। দেশের দুর্নীতির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুৎখাতে যে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সেটা সরকারের দুর্নীতির কারণে, ভুল নীতির কারণে। যেভাবে বিদ্যুৎখাতকে দাঁড় করালে আরও কম দামে বিদ্যুৎ পেতাম সেটা না করে এমন কাজ করছে যাতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখানে ঋণ নিতে গেলে দুর্নীতি, ভুল নীতি নিয়ে আইএমএফ কথা বলবে না। তারা বলবে, ভর্তুকি বন্ধ করে দাম বাড়াও। এই যে কয়েকমাস পরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেলের দাম বাড়ানো হয়, এর সঙ্গে আইএমএফের বিভিন্ন ঋণের শর্ত জড়িত। এর থেকেই বোঝা যায় যে, তাদের ঋণ এ দেশের মানুষের জীবনে কি ভয়াবহ পরিণতিটা আনবে।
তারপরও কেন এই ঋণ নিতে হচ্ছে? অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মতে, কারণ, সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে, প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে।
সমাধানের পথ হিসেবে তিনি বলেন, রিজার্ভ সংকট কমানোর জন্য বৈদেশিক ঋণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্য কিছু উদ্যোগ। তার মধ্যে এক নম্বরে আছে, অর্থ পাচার বন্ধ করা। কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, এসব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এরপর অপ্রয়োজনীয় আমদানি বন্ধ করতে হবে। সরকার বলছে, আমাদের অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তারপরও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির তো প্রয়োজন নেই। তৃতীয়ত, মেগাপ্রকল্পে সরকার যেসব দুর্নীতি ও অপচয় করছে, এর জন্য আমদানি করতে গিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করছে এর কারণেই তো বৈদেশিক মুদ্রার সংকট হচ্ছে। দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট হচ্ছে। সেটাকে ঢাকতে গিয়ে আবার আইএমএফের ঋণ নিয়ে জনগণের ওপর আরেক দফা বোঝা চাপাচ্ছে সরকার। সরকার তার স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার বলে সংকট দূর না করে জনগণের ওপর বোঝা চাপানোর যে প্রক্রিয়া সেটা অব্যাহত রাখছে। এর ফলে, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, দেশের অর্থনীতি একটা বড় চাপে পড়বে। সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে, দেশের অর্থনীতি একটা ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে প্রশাসনিক দামের বিষয়টি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ, তারা নিজেরাই বসে নিজেদের মতো করে আলোচনা করে সার্বিক দিক বিবেচনায় দাম নির্ধারণ করেন। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে এলপিজির দাম সমন্বয়ের বিষয়ে আমি প্রশ্ন করেছিলাম। কিছুদিন আগে এলপিজির দাম খুব বেড়ে গিয়েছিল, মাঝে কমেছে, আবার কিছুদিন আগে অনেক কমে গেছে। এটা জনগণ মেনে নিয়েছে। কারণ, তারা দেখতেই পাচ্ছে বিশ্ব বাজারে দাম কেমন রয়েছে। আমি মুখ্য সচিবের কাছেও প্রশ্ন করেছিলাম, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়টা এলপিজির মতো কেন হলো না? সমন্বয়ের কথা বললে, সেটা সময় সময়ই হোক। তাহলে বিশ্ব বাজারে দাম কমলে আমার দাম কমবে, বাড়লে আমি বেশি দাম দিব। ভারতে এটা বেশ ভালোভাবেই করছে। প্রশাসনিক দাম যখন বলছি, তখন সামাজিক বিবেচনায় এই দাম নির্ধারণ হওয়ার কথা। সামাজিক বিবেচনায় কেউ এমন উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করতে পারে না। সামাজিক বিবেচনায় সবসময় ভর্তুকি দিতে হবে যখন অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাবে। সেটাই প্রশাসনিক দাম। জনগণের কষ্ট হবে, আমাদের মতো দেশের মানুষ সেটা সহ্য করতে পারবে না সেই বিবেচনায় বিশ্ব বাজারের দরে দাম নির্ধারণ হয় না। যদি বিশ্ব বাজারে দাম কমে যায়, তখন সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত যে দাম কমাবে নাকি আগের মতোই রাখবে। কিন্তু প্রশাসনিক দাম ধরে জনগণকে এভাবে চাপ দিব, সেটাতো নীতির বিরুদ্ধে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা তৈরি করেছি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিইআরসির আওতায় পড়লেও সরকার তাদের হাতে তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়টি দেয়নি, নিজের হাতে রেখেছে। এর কারণ হিসেবে বলেছে, মানুষের যেন কষ্ট না হয় তার জন্য তারা এই ক্ষমতাটা তাদের হাতে রেখেছে। কিন্তু আজ দেখছি তারা এর বিপরীতটা করল।
বিশ্ব বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দাম যেহেতু প্রশাসনিকভাবে নির্ধারণ করা হয়, তাই এটা কখনোই এত বেশি বাড়ানো যৌক্তিক নয়। এখানে তারা স্বেচ্ছাচারিতা করছে। কোনো ধরনের নীতি এখানে নেই। এর জন্য বিইআরসির মতো সংস্থার মাধ্যমে দাম বাড়ানো-কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কিংবা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তখন ভর্তুকি দিতে হবে। আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি যে, দাম নির্ধারণে কোনো নির্দিষ্ট নীতি নেই। এর জন্য একটা নীতিমালা থাকা দরকার।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এর থেকে একটা জিনিস প্রমাণ হচ্ছে যে, অর্থনীতি বা সবকিছুতেই আমরা অত্যন্ত চাপে পরে যাচ্ছি। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা প্রমাণ করছেন যে, তারা এই চাপ সহ্য করতে পারছেন না, তাদের হাতে টাকা নেই। সরকার যে ভর্তুকির কথা বলে এবং বিপিসি সম্পর্কিত যে দুর্নীতি-অনিয়মের আলোচনা রয়েছে, সেখানে ভর্তুকির টাকাটা আসলে কে পায়? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তেলের ক্ষেত্রে কাজ করে না। অন্য জায়গায় হয়তো ভর্তুকির টাকা অপচয় হয়, কিন্তু তেলের সঙ্গে ভর্তুকিটা হয় সরাসরি। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে সেচের ওপর যে একটা প্রভাব পড়বে সেটা তো বুঝতেই পারছি, কারণ কিছুদিন আগেই তারা সারের দাম বাড়িয়েছে, বীজের দাম তো বাড়তিই ছিল, এর সঙ্গে যোগ হলো ডিজেলের দাম। এর প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে, কারণ পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে।
অধ্যাপক ইজাজ বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে ১৪০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এটা দেখে দেশে তেলের দাম বাড়ালেন। কিন্তু তাদের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সময় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমছে। গতকাল এই দাম ৯৪ ডলারে নেমে এসেছে। বাড়িয়ে নতুন যে দাম নির্ধারণ করা হলো এটা কিন্তু ৯৪ ডলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। কাজেই, সমন্বয়ের যে কথা বলা হচ্ছে সেই ঘোষণার সঙ্গে বাজারের দাম পরস্পর সাংঘর্ষিক। এর মধ্যে ডলারের একটা সংকট আছে। দেশ যখন সবদিক থেকে সাংঘাতিক চাপে আছে, তখন তারা প্রশাসনিক দামটা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। আমার উপদেশ হবে, এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। বিশ্ব বাজারে যে দাম আছে, সেই দামেই তেল দেয়া উচিত। যখন দাম বাড়বে তখন বেশি থাকবে, যখন দাম কমবে তখন মানুষ কম দামে তেল কিনবে, যোগ করেন তিনি।
এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বিশ্ব বাজারে দাম যখন বাড়বে তখন আমি বাড়াবো, কিন্তু দাম কমলে কমাবো না, সেটাকে সমন্বয় বলা যায় না। জ্বালানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো-কমানো বা সমন্বয়ের জন্য আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। এভাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এই দাম নির্ধারণ করতে গেলে তা আসলে জনগণের স্বার্থে বা দেশের স্বার্থে হবে না।