রাজধানীতে পরিবহন সংকট, গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১১ এএম, ৬ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:০৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ বৃদ্ধির খবরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। গণপরিবহন কম থাকায় অনেকেই হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যে। এদিকে এ সংকটের মধ্যেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে যাত্রীরা।
আজ শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে নগরীর ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর, গাবতলী, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় এ দুর্ভোগ দেখা গেছে।
এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর প্রায় ফাঁকা রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ পর-পর সাই-সাই করে যাচ্ছে গণপরিবহনগুলো। নির্দিষ্ট স্টপেজেও থামছে না বাসগুলো। দু-একটি থামলেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অপেক্ষারত যাত্রীরা। গন্তব্যে যেতে কেউ কেউ ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছেন।
এসময় যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তোলে। যাত্রীদের দাবি, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি নিচ্ছে বাসগুলো। যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার পর থেকে রাজধানীতে গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বাসের হেলপার-কন্ট্রাক্টরদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেশি, তাই কিছু করার নেই।’
ফার্মগেট মোড়ে দাঁড়ানো বকুল মিয়া। যাবেন উত্তরা। গাড়ি পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘ভাই আধাঘণ্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছি। গাড়ি নেই। দুটো আসছিল, যাত্রীর চাপে উঠতে পারিনি। আবার ভাড়া চাচ্ছে ডাবল।’
সোহরাওয়ার্দী কলেজ গেট বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষা করছেন তানিয়া আক্তার। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, যাবেন সায়েদাবাদ। তিনি বলেন, ‘২৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। দু’একটি বাস আসে, কিন্তু থামায় না। একটি পেয়েছি, কিন্তু এখান থেকে ১০০টাকা ভাড়া চায়। তাই উঠি নাই। এত ট্যাকা কই পামু! এখনো বেতনও পাই নাই।’
শ্যামলি শিশুমেলা বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষা করছেন জাহিদ মিয়া। তিনি যাবেন, বাড্ডায়। তিনি বলেন, ‘বাস পর্যাপ্ত নেই। আবার ভাড়াও বেশি চায়। আমাদের বেতন তো বাড়ে না। ঢাকা ছেড়ে চলে যাবো। কই যাবো, গ্রামেও তো বাপের সম্পত্তি নেই। এভাবে সবদিক থেকে ভোগান্তি বাড়লে কই যাবো, কি করবো?’
গাবতলীর ৮ নম্বর বাসের কন্ট্রাক্টর তপন বলেন, ‘ভাই আমরা কী করুম? মহাজনরে দিন শেষে জমার ট্যাকা দিতে হয়। তাই বেশি চাচ্ছি। অনেকে গাড়ি ছাড়ে নাই, আমরা সাহস কইরা নামছি রাস্তায়।’
শিয়া মসজিদ থেকে উত্তরাগামী একটি গণপরিবহনের ড্রাইভার সাজু মিয়া বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে? সকালেই যাত্রীরা আমাদের গালিগালাজ করছে। বাস কম রাস্তায়, আমরাও তেলের দাম না উঠাতে পারলে গাড়ি চালাবো না।’
অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে অন্য জেলাগুলোতেও পরিবহন সংকটের খবর মিলেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় শনিবার সকাল থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক সমিতি। তারা জানিয়েছে, জ্বালানির দামের সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি চলবে না। একই কারণ দেখিয়ে অনেক আন্তঃজেলা পরিবহনও রাস্তায় নামছে না।
ভোক্তা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ৮৬ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছিল।