ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে রুট পারমিট ছাড়াই চলছে যাত্রীবাহী যানবাহন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২১ পিএম, ২৯ জুলাই,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪০ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বেশ কিছু যানবাহন চলাচল করছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। তবে এসব যানবাহনের অধিকাংশেরই নেই রুট পারমিট।
বিভিন্ন কোম্পানির ব্যানার ব্যবহার করে সরকারের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ সব যাত্রীবাহী পরিবহন।
আটটি কোম্পানির নামে কয়েক শতাধিক পরিবহন চলাচল করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে। কতগুলো যানবাহনের রুট পারমিট রয়েছে কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও হাইওয়ে পুলিশের কাছে।
অনুসন্ধানে জানা যায় , ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্থান থেকে বিভিন্ন নামে মানিকগঞ্জ ও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত যানবাহনগুলো হচ্ছে ২১৬টি সেলফী পরিবহন, ৩২টি দ্রুতগতি পদ্মা পরিবহন ও ৩০টি যাত্রীসেবা পরিবহন। চিটাগাং রোড থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ৭০টি নীলাচল পরিবহন। গুলিস্থান থেকে মানিকগঞ্জ ও পাটুরিয়া পর্যন্ত ৬০টি শুভযাত্রা এবং ১২টি এসি লিং। পাটুরিয়া থেকে নবীনগর পর্যন্ত চলাচল করে ১৫টি উনিশে পরিবহন। জেলার অভ্যন্তরীণ রয়েছে দুইশ মতো স্বপ্ন পরিবহন।
মহাসড়কে চলাচলের জন্য আরডিসির সভায় রুট পারমিট দেয় পরিবহনগুলোকে। তথ্যানুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৬০টি সেলফীর রুট পারমিটের বিপরীতে চলছে ২১৬টি, নীলাচলের রুট পারমিট ৭০টি, শুভযাত্রার ৬০টি। অন্য যে সব পরিবহন চলাচল করছে তাদের কোনো ধরনের রুট পারমিট নেই। স্থানীয়ভাবে ওই সব দপ্তরগুলোকে ম্যানেজ করেই চলছে রুট পরমিটহীন যানবাহনগুলো।
নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিবহনের চালক ও মালিক বলেন, যে যানবাহনের রুট পারমিট নেই ওই সব যানবাহনের বৈধতার জন্য মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতি রয়েছে। ওই সমিতির মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই মহাসড়কে চলছি। আপনারা (সাংবাদিক) যখন লেখালেখি করেন তখন অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করে তবে অভিযানের কথা আগেই আমাদের সমিতিকে জানিয়ে দেয় বলেও জানান একাধিকজন।
আলোচিত পরিবহন সেলফীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ৬০টি গাড়ির রুট পারমিট আছে তবে গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে ১৭০টি। বাকি গাড়িগুলোর রুট পারমিট খুব দ্রুতই হয়ে যাবে। রুট পারমিট ছাড়া মহাসড়কে চলাচল করাটা অপরাধ এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
নীলাচল পরিবহনের মানিকগঞ্জ ইনচার্জ চন্ডি চক্রবর্তী বলেন, তাদের চিটাগাং রোড থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ৭০টি গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে। বর্তমানে গড়ে ৬০টি গাড়ি চলাচল করছে।
দ্রুতগতির পদ্মা পরিবহন ও উনিশে পরিবহনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অধিকাংশ পরিবহনের রুট পারমিট নেই। এই রুট পারমিট ছাড়া কিভাবে যানবাহন চলাচল করছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান বলেন, মহাসড়কে প্রতিনিয়ত আমাদের মোবাইল টিম গাড়ির কাগজপত্র চেকিং করছে এবং মামলাও করছে। পরিবহনের চালক ও মালিকরা বলছে হাইওয়ে থানা ম্যানেজ করেই চলাচল করছে রুট পারমিটহীন যানবাহন এমন প্রশ্ন করলে তিনি এটাকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মানিকগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, মানিকগঞ্জ অঞ্চলে কতগুলো যানবাহন রুট পারমিট ছাড়া চলাচল করছে সেটার কোনো তালিকা নেই । সেলফী ৬০টি, নীলাচল ৭০টি, শুভযাত্রা ৬০টির রুট পারমিট আছে তবে তাদের কোনো কাগজ দপ্তরে নেই। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, রুট পারমিট ছাড়া যাত্রীবাহী গাড়ি রাস্তায় নামানোর কথা নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে রুট পারমিটবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।