পূর্বাচলে জমি দিয়েও প্লট পাননি তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৫ পিএম, ২০ জুলাই,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে জমি দিয়েও প্লট বরাদ্দ না পেয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অনেকে। কেউ ভুগছেন কর্তৃপক্ষের ভুলে, কেউবা জেলা প্রশাসন অফিসের। পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ পেতে জমি দেয়া ওই আদি বাসিন্দারা কখনও অংশ নিচ্ছেন সেবা সপ্তাহে, কখনও গণশুনানিতে। কিন্তু তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষই হচ্ছে না।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে ঢাকার খিলক্ষেত থানা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ছয় হাজার ১৫০ একর জমিতে বাস্তবায়ন শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০১০ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপর আরও দু দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে এক পর্যায়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার কথা বলা হলেও সেটা আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। রাজউকের স্টেট ও ভূমি শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রথমে আদি বাসিন্দাদের সাড়ে তিন হাজারের মতো আবেদন ছিল। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ১ হাজার ৪০০ জনকে পূর্বাচলে তিন ও পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে আবেদন করেছেন আরও প্রায় ২০০ জন। তাদের আবেদন যাচাই করা হবে। যারা পাওয়ার যোগ্য হবেন তাদের নাম বোর্ড সভায় ওঠানো হবে বলে জানা গেছে। পূর্বাচলে জমি দিয়ে প্লটের জন্য রাজউকে ধরনা দিচ্ছেন হাসনারা বেগম। তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার উলুখোলার গ্রামের বাসিন্দা। তার দাবি, তিনি তার ৩৯ শতাংশ জমির বিপরীতে তিন কাঠার একটি প্লটের আবেদন করেন। ২০১৮ সালে প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের নাম হতে তার নাম বাদ পড়ায় তিনি আবার আবেদন করেন। সোমবার (১৮ জুলাই) রাজউকের গণশুনানিতে অংশ নেন হাসনারা। সেখানে তিনি জানান, আমার জমি ছিল দুই আরএস দাগে ৬৯০ ও ৬৮১। কিন্তু ডিসি অফিস ভুল করে আমার অ্যাওয়ার্ডে ৬৮১ নম্বর দাগটি উল্লেখ করেননি। এজন্য আমার নামে প্লট বরাদ্দ হয়নি।
তিনি বলেন, ডিসি অফিস ভুল করলে আমার তো দোষ নেই। ভলিউম দেখা-লেখা আমার কাজ নয়। রাজউকে এলে বলে ডিসি অফিস থেকে নতুন অ্যাওয়ার্ড নিয়ে আসেন। ডিসি অফিসে গেলে বলে আমরা চিঠি কেন দেব। আমি এখন কী করবো? জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, পুরনো বিষয় তো, আমি বলতে পারবো না। তবে আমরা প্রতি বুধবার গণশুনানি করি। ভুক্তভোগী ওই দিন এলে আমি আশ্বস্ত করতে পারি। সব কিছু ঠিক থাকলে তার সমস্যার সমাধান হবে। আরেক ভুক্তভোগী মো. আজিজুল হক। তিনি ২০১১ সালে আওয়ার্ড পান এবং ২০১৭ সালে তিন কিস্তিতে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ২০১৩ সালে তিনি রাজউকে পাঁচ কাঠার প্লটের জন্য আবেদন করেন। ২৪ নং সেক্টরে ৫ নং রাস্তার পাশে পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু আমি প্লটের দখল ও লিজ দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারছি না। কারণ ০০২ নং প্লটটি দ্বৈত বরাদ্দ হয়েছে। রাজউক আমার আগেও একজনকে বরাদ্দ দিয়েছে। ওই ব্যক্তি আমার আগে কাগজপত্র পেয়েছে বলে আগে রেজিস্ট্রি পেয়েছেন, বলেন আজিজুল হক। আজিজুলের ভাই রহমতউল্লাহ রাজউকের সোমবারের গণশুনানিতে অংশ নেন।
তিনি বলেন, আজ আমি পঞ্চমবারের মতো শুনানিতে এসেছি। এর আগে ২৯ মে অংশ নিয়েছিলাম। তখনকার রাজউক চেয়ারম্যান বলেছিলেন আগামীবার আপনার সমস্যার সমাধান না হলে হয়রানির জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দিয়েন। সেই সমস্যার এখনও সমাধান হয়নি। রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. শফিউল হক গণশুনানিতে বলেন, যারা বিভিন্ন ভুল-ত্রুটির কারণে প্লট বরাদ্দ পাননি এবং আবার আবেদন করছেন তাদের আবেদন যাচাই করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। যাদের কাগজপত্র সঠিক করা হয়েছে তাদের বিষয়টি বোর্ডে উঠানো হবে। কমিটি কাজ করছে। যাদের কাগজপত্রে ভুল আছে, সেগুলো যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।