বর্জ্য অব্যবস্থাপনায় বস্তির ৩৪ শতাংশ মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩১ পিএম, ২৩ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫১ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে বস্তির ৩৪ শতাংশ মানুষ নানা জটিল রোগে ভোগেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার সরাসরি কোনো বাজেট দেয় না, মন্ত্রণালয়গুলো কিছু প্রকল্প দেয়। অন্যান্য দেশের মতো আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না, কিন্তু মিথেন গ্যাস নিঃসরণ করে আমরা জলবায়ুর ক্ষতি করছি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হয় ঢাকা শহর থেকে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। ডিএসকে কনসোর্টিয়াম এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওরের (কাপ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত প্রভাবের প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেন ঢাকা কলিং প্রজেক্টের কারিগরি উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিষয়ে বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দেশের জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত কিন্তু আমাদের দেশে দেয়া হচ্ছে ১ শতাংশ। আমরা চাই এই বরাদ্দ ২ শতাংশ করা হোক।
বক্তারা আরও বলেন, বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এক গবেষণায় দেখা যায় বস্তির ২৭ শতাংশ মানুষ ময়লা পানির জন্য এবং ১৯ শতাংশ জলাবদ্ধতার কারণে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সংবাদ সম্মেলন থেকে বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরা হয়- দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে একযোগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজ নিজ কর্ম পরিসরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য দুর্ভোগ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে কাজ করতে পারে।
২. বস্তি এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরগুলো উদ্যোগ নিতে পারে।
৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৪. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবগুলো মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে।
৫. মানসিক রোগ এখনও বাংলাদেশে নীরব খুনির ভূমিকায় আছ। আর স্বল্প আয়ের মানুষরা একে রোগ হিসেবে বিবেচনাই করেন না। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে প্রান্তিক নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে তার আশু সমাধানে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিদ্যমান আইনগুলোতে জনস্বাস্থ্য অনুপস্থিত। এটি শুধুমাত্র বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এই দায়িত্বের আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে যৌথ পরিকল্পনা ও মনিটরিং কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে।
৭. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে বিদ্যমান আইনগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সাধারণ নাগরিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনে সরকারকে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে।
৮. কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন বাসাবাড়ির পচনশীল বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার, মনুষ্য বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আবার, উন্নত দেশগুলোর আদলে বর্জ্য রিফিউজড ডিরাইভড ফুয়েল উৎপাদন করা যেতে পারে।
৯. সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বিস্তারিত এবং ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করে বর্জ্যরে কারণে জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিরূপণ করে তা সমাধানে কাজ করা যেতে পারে।
১০. নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ঋতুকালীন প্যাড ব্যবহারের হার বাড়ছে। কিন্তু কিভাবে পরিবেশ সম্মতভাবে সেগুলো অপসারণ করা হবে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।