ঢাকার দুই সিটির ৩৬ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১০ পিএম, ১৯ জুন,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৪ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
শুক্রবার (১৭ জুন) মুষলধারে বৃষ্টির পর শনিবারও (১৮ জুন) জলাবদ্ধতায় ভুগেছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষত, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে সমস্যাটি বেশি। নিচু হওয়ায় এবং পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই এসব এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যায়। এমনকি বাসাবাড়িতেও পানি ঢোকে।
রাজধানীর বাসিন্দারা বলছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উত্তরখান, দক্ষিণখান, ভাটারা, উত্তরার একাংশ, বাড্ডা, সাতারকুল ও বেরাইদ এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় ডেমরা, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, শনিরআখড়া এলাকা থেকে শনিবারও পানি সরেনি।
ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরনো ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে জুরাইনের আলমবাগ, গেন্ডারিয়ার ঢালকানগর, দয়াগঞ্জমোড়, মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও বনানীর বিআরটিএ অফিস এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে। দুই সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু সমাধান সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
দক্ষিণখানের আইনুচবাগের বাসিন্দা ইয়াছিন রানা বলেন, শুক্রবারের বৃষ্টির পানি শনিবারও সরেনি। ৪৮ নং ওয়ার্ডের আইনুচবাগ, নদ্দাপাড়া, নগরিয়াবাড়ি, মোল্লাবাড়ি, গার্লস স্কুল রোড, মধুবাগ ও হলান এলাকার রাস্তাঘাট এখনও পানিতে ডুবে আছে। শনিবারও আমি হাঁটু পানি অতিক্রম করে এলাকা থেকে রের হয়েছি। তিনি আরও জানান, ৪৯ নং ওয়ার্ডের আশকোনা বাজার, উচারটেক, গাওয়াইর এবং ৫০ নং ওয়ার্ডের মোল্লারটেক, চৈতি গার্মেন্টস, ফায়েদাবাদ কবরস্থান, আজমপুর বাজার ও প্রেমবাগান এলাকায় নিয়মিত পানি জমে থাকে। ইয়াছিন রানা বলেন, ‘পানি জমার কারণ হচ্ছে, আমাদের এলাকাটি নিচু। এলাকাটি তুরাগ নদীর কাছাকাছি হওয়ার পরও কোনও পানি নিষ্কাশন লাইন করে সরানোর ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। শনিবার ডেমরার ডগাইর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিমও একই ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মদিনাবাগ, ডগাইর বাজার, আলামিন রোড ও গ্রিন রোড এলাকায় কোথাও কোথাও হাঁটু সমান বা তার চেয়ে বেশি পানি জমে আছে। আবদুল রহিম বলেন, আমাদের এলাকাটি নিচু। পানি নিষ্কাশন লাইনও অপ্রতুল এবং খালের ওপর উন্নয়ন কাজ চলায় পানি জমে যাচ্ছে। ডিএসসিসির সায়েদাবাদ, ডেমরা ও মাতুয়াইল অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় জানান, জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলো তারা ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছেন এবং এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, আমরা ডেমরা, মাতুয়াইল এলাকার জলাবদ্ধতাসহ সার্বিক সমস্যা দূর করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছি। পরিকল্পনা প্রণয়ন শেষের দিকে। জুরাইন মেডিক্যাল রোড ও কুসুমবাগের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই প্রকৌশলী বলেন, পুরনো এলাকার মধ্যে জুরাইনের আলমবাগ ও গেন্ডারিয়ার ঢালকানগর এলাকার পানি নামানোর জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দরকার। কারণ এ দুটি এলাকার পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে নিষ্কাশন করতে হবে, কিন্তু আমরা দেখছি এলাকা দুটি নিচু, আর বুড়িগঙ্গার দিকে প্রবাহিত এলাকাটি উঁচু। ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ায় জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে, মিরপুর ১০ নং গোলচত্বর এলাকায় পানি নিষ্কাশন সংযোগ না থাকা। সেটি নিয়ে ওয়সার এক ঠিকাদারের সঙ্গে আইনি ঝামেলা চলছিল। সম্প্রতি মেয়র আতিকুল ইসলাম তাদের সঙ্গে বসেছেন এবং শিগগিরই এর নির্মাণ কাজ শুরু। ডিএনসিসির ড্রেনেজ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমরা নতুন ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ওই এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট ও পানি নিষ্কাশন সংযোগ তৈরির কাজ করছে। ডিএনসিসির অধীনে খালগুলোতে দখল ও ভরাট রয়েছে। সেনাবাহিনী খালের সীমানা নির্ধারণে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আশপাশের ৮টি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যোগ করা হয়। পরে এই ইউনিয়নগুলোকে নতুন ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের শ্যামপুর ইউনিয়নকে ৫৮ ও ৫৯, দনিয়াকে ৬০, ৬১ ও ৬২, মাতুয়াইলকে ৬৩, ৬৪ ও ৬৫, সারুলিয়াকে ৬৬, ৬৭ ও ৬৮, ডেমরাকে ৬৯ ও ৭০, মান্ডাকে ৭১ ও ৭২, দক্ষিণগাঁওকে ৭৩ ও ৭৪ ও নাসিরাবাদকে ৭৫ নং ওয়ার্ড করা হয়। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরে যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়ন ভেঙে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্য বাড্ডা ইউনিয়নকে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটারাকে ৩৯ ও ৪০ ওয়ার্ড, সাঁতারকুলকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, বেরাইদকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, ডুমনিকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরখানকে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, দক্ষিণখানকে ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং হরিরামপুরকে ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়।