বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকির পরামর্শ এফবিসিসিআইয়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৩ পিএম, ২১ মে,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫৪ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বর্তমান বিশ্বের সংকটময় পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুতে দাম বাড়ালে পণ্য দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ব্যাপকহারে বেড়ে যাবে। তাই এ সময় জ্বালানির দাম না বাড়িয়ে সরকারকে এ খাতে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন।
আজ শনিবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে যারা গ্যাস, বিদ্যুতসহ জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছে, তার মূলত সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জিডিপির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মহামারির মধ্যে আমাদের উৎপাদন খরচ বহুগুণে বেড়েছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমন সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও উৎপাদন উপকরণসহ সকল খাতে ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় ও ব্যবসা পরিচালনার খরচ বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র মূল্যস্ফীতির হার দুই সংখ্যার বেশি হওয়ার প্রকোপে জনজীবন বিপর্যস্ত এবং আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে আমাদের রফতানি শিল্পে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং অন্যদিকে রফতানি খাতে বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাসের সাথে সাথে মূল্য বৃদ্ধিজনিত বৈশ্বিক প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা প্রকৃত অর্থে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এবং বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের ওপরও পড়ছে। আবার সঞ্চয় কমে যাওয়ার ফলে বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং খাতের অর্থ প্রবাহে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও এলএনজির ওপর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের সাময়িক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা সমীচীন নয়। জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্য পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার পরই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা যেতে পারে। সরকার বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। এমন সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে সকল পণ্যের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের পরিচালনা দক্ষতা, ন্যূনতম ব্যয় এবং বিতরণে আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়নি। করোনা ও ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পড়ছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রফতানি খাতের পক্ষে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে দাম না বাড়িয়ে কৌশলগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিয়ে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা।