তেঁতুলতলা মাঠের সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি - রিজওয়ানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১১ পিএম, ১৩ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১৭ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকা শহরে তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির আপাত সমাধান হয়েছে বলা যায়। কিন্তু এ মাঠের ওপর জনগণের পূর্ণ অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে মাঠে লাশ ধোয়া হতো, ঈদের নামাজ পড়া হতো, শিশুরা খেলাধুলা করত সেই ছোট্ট মাঠ নিয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে, থানা হাজতে যেতে হয়েছে, যা দুঃখজনক। আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকা শহর আজ একটি দর্শনহীন, ভিশনহীন ও সমন্বয়হীন দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন একটি সুস্পষ্ট নগর দর্শন, যা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ শহর নিয়ে আমাদের সামনে স্পষ্ট কোনো ভিশনও নেই। আজ আমাদের প্রধান দাবি হবে ঢাকা শহরের একটি সুস্পষ্ট ভিশন। নগরপিতা-নগরমাতা এসব ধারণা ও সম্বোধন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ঢাকা শহরের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। এরপর ৭ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে।
কিন্তু এখনো তা নবায়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বাস্তবায়নে ভূমিদস্যুদের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়। ঢাকা শহরে রয়েছে ৭টি নদী, যা পৃথিবীর কোনো শহরে নেই। ঢাকায় ৭টি নদী থাকলেও পানি আনতে হচ্ছে পদ্মা থেকে। এই ৭টি নদীকে সুরক্ষা করে সচল ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারলে এ শহর হবে দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর নগরী।
আজ শুক্রবার সকালে এফডিসিতে আয়োজিত ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিয়ে ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ইউসিবি পাবলিক শিরোনামে এই প্রতিযোগিতায় ঢাকা কলেজকে পরাজিত করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
প্রতিযোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সুশাসনের কথা বলেছেন, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। এই কথাটা বলার আগে আমি মনে করি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। আমাদের বলতে হবে, সকল পর্যায়ে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার আমরা চাই। যদি সেই সরকার ভালো কাজ না করে পরের নির্বাচনে আপনার এবং আমার ক্ষমতা থাকবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সুশাসন পাব না, যতক্ষণ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা ঠিক করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আপনারা সবাই রাজা হতে চেয়েছেন। আমরা রাজা হব কেমন করে? ভোটটা তো দিতে হবে আমাদের। শুধুমাত্র ভোট দিয়ে বসে থাকলে হবে না। আমাদের অধিকারের যেখানে বাধা ঘটবে সেখানে সজাগ প্রহরীর মতো বলতে হবে- এটা আমার অধিকার, আমার অধিকারের মধ্যে আপনারা হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। যেকোনো গণতান্ত্রিক ভাবধারায় নাগরিকদের সজাগ থাকাটা খুবই জরুরি। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। এরশাদ সাহেব আর কোনোদিন বাংলাদেশে ক্ষমতায় ফিরবেন না। আপনারা যেমন আজকে ভাবছেন, সমাধান হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এই সমাধানটা আসলে এতো সহজ না। এটা একটা পদ্ধতি, এখানে সব সময় আমাদের সজাগ থেকে অবস্থান নিতে হবে। আমরা কোনো শক্তির পক্ষে বা বিরুদ্ধে না। আমরা একটা মূল্যবোধের পক্ষে বা একটা মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। আমরা একটা মূল্যবোধকে বিরোধিতা করে আরেকটা মূল্যবোধকে সমর্থন করি। সেখানে আমাদের অধিকার ও দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নগরীতে পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার করে, দূষণমুক্ত পরিবেশ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ নাগরিক ভোগান্তি দূর করতে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশনগুলো। যত্রতত্র গড়ে উঠছে শপিং সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বাণিজিক কার্যালয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল সিটি করপোরেশনের আবাসিক এলাকাগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। ঝুলন্ত তারের নগরীতে পরিণত হচ্ছে শহরগুলো। মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে সিটি করপোরেশনের মার্কেটগুলোতে অননুমোদিত দোকানপাট তুলে অরাজকতা তৈরি করছে কিছু অসাধু চক্র। অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তাঘাট তলিয়ে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। কি বৃষ্টি কি বর্ষাকাল যে সংস্থার যখন খুশি রাস্তা কাটাছেঁড়া করছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নাকি ওয়াসা তা নিয়ে চলে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। অল্প বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম শহর পানিতে তলিয়ে যায়। ম্যানহোল ও খালে পড়ে বারবার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বেহাল দশার চিত্র সবাইকে কাঁদিয়েছে। ঢাকা শহরের কলাবাগানে যখন শিশুদের ছোট একটি খেলার মাঠ, পুলিশের জন্য থানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় তখন আমরা হতাশ হই। কিন্তু আমরা আবার আশায় বুক বাঁধি যখন আমরা দেখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিশুরা তাদের খেলার মাঠ ফিরে পায়। এ জন্য জনাব কিরণ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাঠটিকে পুরোপুরি জনগণের সম্পত্তি হিসেবে প্রদানের জন্য আবেদন জানান। অন্যদিকে ধানমন্ডিতে অবস্থিত খেলার মাঠটি প্রাইভেট সিকিউরিটি দিয়ে বন্ধ না রেখে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা দাবি জানান তিনি।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক অমিতোষ পাল, সাংবাদিক মনির মিল্লাত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।