অপ্রতিরোধ্য ছিনতাই, নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩২ পিএম, ২৯ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১২:০০ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজধানীজুড়ে চলছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা ও দৌড়ঝাঁপ। শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছে মানুষ। কেউ ছুটছেন নাড়ির টানে বাড়ির পানে। কিন্তু এর ফাঁকে থেমে নেই ছিনতাইকারীরা। তাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কেউ ফোন হারাচ্ছেন, কেউ মানিব্যাগ আবার কেউ তল্পিতল্পাসহ সবকিছু। ছিনতাইকারীরা এই মুহূর্তে অপ্রতিরোধ্য বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। তাদের রুখে দেয়ার যেন কেউ নেই, ছিনতাইকারীরা পুলিশের নাগালের বাইরে বলেও অভিযোগ তাদের।
সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাইয়ের হার বেড়ে গেছে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় অনেকে আহতও হয়েছেন। গত ২২ এপ্রিল সকালে রাজধানীর পল্টন হাউজ বিল্ডিং মোড় কস্তরী হোটেলের সামনের সড়কে সোনারগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যাপক মো. মামুন মাহমুদ নামে এক শিক্ষক ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী ডেমরা মহাসড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হন নাজমুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি সকাল বেলা যাত্রাবাড়ীতে বাস থেকে নেমে ডেমরার বাসায় ফিরছিলেন। একই দিনে মাগরিবের পর পরীবাগ এলাকায় এসএ টিভির একজন সাংবাদিক ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ সময় তিনি মোবাইল ফোনটি হারান।
২৪ এপ্রিল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় নাবিস্কোর সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন আবুল হাসান নামে এক ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এ ব্যাপারে আবুল হাসান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি জিডি করেছেন।
এদিকে রাজধানীতে ধারাবাহিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাঁড়াশি অভিযানে নামে র্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত রাজধানীর লালবাগ, সিদ্ধিরগঞ্জ, পল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, ওয়ারিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে একদিনে ছিনতাইকারী চক্রের ৩১ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ এক হাজারের বেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি মোবাইল ফোন, ট্যাব এবং ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
গত ২৬ এপ্রিল কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্র ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মোবাইল কেনাবেচার রমরমা বাণিজ্য চলছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি ও ছিনতাই হওয়া ফোন, ট্যাব ও ল্যাপটপ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভাসমান দোকানে গোপনে বিক্রি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ এপ্রিল রাতে অভিযান চালিয়ে ৩১ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযানে গ্রেফতারদের কাছ থেকে ৩০টি ট্যাব, টাচ মোবাইল ৭১৭টি, বাটন মোবাইল ৭৯৩টি, ল্যাপটপ (নতুন) ২৮টি এবং নগদ ৫৫ হাজার ৬৪৭ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মূলত ছিনতাই বা চুরি করা মোবাইল ফোনগুলো অল্প দামে ক্রয় করে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করে। গ্রেফতার প্রত্যেকেই মুঠোফোন ছিনতাই ও চোরাই চক্র এবং ক্রয়-বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
অধিনায়ক বলেন, র্যাব ৩-এর আওতাধীন এলাকায় অন্তত ২০টির বেশি মোবাইল ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। চুরি এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করতো।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ বলেন, দু-একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে কেউ অভিযোগ করছে না। অভিযোগ করলে অন্তত পুলিশ জানতে পারে যে, ওই এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে তখন পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে হোক না কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটলে থানায় অভিযোগ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা পুরো ঢাকা শহরে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ঈদের সময় যেন সবাই নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে সে জন্য পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে মাঠে কাজ করছে।