রেলের টিকিট পেতে সহজে কঠিন, কাউন্টারে চাপ ১০ গুণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৭ পিএম, ২৬ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৬ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সকাল ৮টা বাজলেই শুরু হয় অনলাইনে রেলের টিকিট কাটার তোড়জোড়। নতুন চুক্তিবদ্ধ সহজের ওয়েবসাইটের বেহাল দশার কারণে অনলাইনে টিকিট পাওয়া এক রকম ভাগ্যের বিষয়। প্রবেশের ৭ মিনিটের মাথায় দেখা যায় সব সিট বুক হয়ে গেছে। অন্যদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের কথা তো সবারই জানা। অগ্রিমের টিকিটের চাপে পড়েছে পুরো স্টেশন পাড়া। ৩০ এপ্রিলের টিকিট গতকাল দেয়া শুরু হলেও স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ গতকাল থেকেই। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই অধিকাংশের। কারণ মোট টিকিটের সংখ্যার চেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ১০ গুণ বেশি মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টায় কমলাপুরে রেলস্টেশনে ঠাসা ভিড়। লাইনের মাথা ও শেষ ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বের করা কঠিন। একেক লাইনে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। এদের অধিকাংশই ২৯ এপ্রিলের টিকিট না পেয়ে রেলস্টেশনে থেকে গেছেন ৩০ এপ্রিলের টিকিট পাওয়ার আশায়। লাইনে নতুন করে কেউ ঢুকলেই শোরগোল পড়ে যাচ্ছে পুরো স্টেশনে। দেখা গেছে, টিকিট প্রত্যাশীদের অনেকেই স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার পেয়ে যাচ্ছেন কাক্সিক্ষত সেই সোনার হরিণ। এমনই একজন রুবেল মিয়া। যাবেন রংপুর।
তিনি বলেন, গতকাল লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাইনি। তাই কাউন্টারে অপেক্ষমাণদের মধ্যে নিজেরা সিরিয়াল বানিয়ে থেকে গেছি। গতকাল সকালে লাইনে দাঁড়িয়েই নিজের ফোনে চেষ্টা করছিলাম অনলাইনে টিকিট কাটার। ভাগ্যগুণে পেয়ে গেছি। লালমনিরহাটের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন সেলিম। বলেন, শুধু চাওয়া দুটো টিকিট। এজন্যই আমাকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে গতকাল। তবুও যেন আশা নেই। তাই দাঁড়িয়ে অলস না থেকে অনলাইনেও চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
এদিকে দুদিনের চেষ্টাতেও টিকিট না পেয়ে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদেরই একজন আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, অনলাইন বুঝি না, তাই কাউন্টারে অপেক্ষা করছি। দীর্ঘ লাইন, টিকিট পাবো কিনা সেই আশা নেই। তবুও দাঁড়িয়ে আছি, যদি। রাজশাহী রুটের টিকিট প্রত্যাশী সবুজ মিয়া জানান, আমার দরকার দুটি টিকিট। লাইনে দাঁড়িয়েই অনলাইনে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। একটি টিকিট পেয়েও ছিলাম। সেটিও কিনতে পারিনি পেমেন্ট ডিজেবল সমস্যায়। এখন কাউন্টারই ভরসা। অনলাইন টিকিট প্রত্যাশীরা জানান, সার্ভারে চাপ অনেক বেশি। ঢোকাই যাচ্ছে না। ঢুকতে পারলেও সিট বুক দেখাচ্ছে। আবার সিট থাকলেও পেমেন্ট থেকে যাচ্ছে পেন্ডিংয়ে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে পারবেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে প্রায় ২৭ হাজার। এখন সবাই যদি ট্রেনে যেতে চান সেটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না। কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল বলেছেন, কালকের টিকিটের জন্য যদি মানুষ গতকাল লাইনে দাঁড়ায়, তাহলে আমাদের কী করার আছে। আজকের টিকিট নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই। আমরা তো সিস্টেম করেছি, এখানে অন্য কোনো সুযোগ নেই। কারণ আপনার টিকিটে আমি যেতে পারব না।
মন্ত্রী বলেন, চাহিদার তুলনায় আমাদের ট্রেনের সংখ্যা কম। ঈদে ৫০ লাখ মানুষ প্রতিদিন রাজধানী ছাড়বে। অথচ রাস্তার সক্ষমতা হলো মাত্র ১৫ লাখ। অনলাইনে সবাই টিকিট পাবেন না। পাঁচ লাখ মানুষ যদি যেতে চায়, আমি তো সবাইকে টিকিট দিতে পারব না।