মিল্কী হত্যার প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে খুন : র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৯ পিএম, ২ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:০৮ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর আ.লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। ২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী ও ২০১৬ সালের রিজভি হাসান ওরফে বোচা বাবু - এ দুই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে টিপু হত্যার ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। টিপুর অন্যতম সহযোগী ছিলেন রিজভী হাসান বাবু। টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ গ্রেফতার ৪জনের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ৪জন জানিয়েছে, মিল্কী হত্যা মামলায় রেহাই পায় টিপু। এরপর বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্যে টিপুর প্রভাব বিস্তার করলে তাকে হত্যা করেন তারা।
উল্লেখ্য, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড এর সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। এর ৩ বছরের ভেতর একই এলাকার বাসিন্দা বোচা বাবু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
গ্রেফতার ফারুক ও পলাশ প্রায় একই রকম তথ্য দিয়ে জানায়, মিল্কী হত্যাকাণ্ডে টিপুর সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে তারা মানববন্ধন, আলোচনা সভা, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেও লাভ হয়নি। জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা হতে অব্যাহতি পায়। পরবর্তীতে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে গ্রেফতার ওমর ফারুক ও অন্যান্য সহযোগীরা।
বর্তমানে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার চলছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানায়, তাদের ধারণা প্রতিপক্ষ টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালামের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা।
জাহিদুল ইসলাম টিপুর কারণে তারা ব্যর্থ হয় বলে জানায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা। ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা একপর্যায়ে রিজভীর বাবা কালামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেফতার মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে বলে ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা। মোরশেদুল আলম রাজী থাকা সত্ত্বেও জাহিদুল ইসলাম টিপুর চাপে তিনি সাক্ষ্য দেন। এতে আরো ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওমর ফারুক গং।
এদিকে কালামের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে গেলে তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা ছিল, বাদী কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন না। পরবর্তীতে মোরশেদুল আলমকে নিজ দলে ভিড়িয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা।
হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় মোরশেদুল আলম। উল্লেখ্য , মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশীটভূক্ত ৩নং আসামি। হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই গমন করেন। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়।
টিপু হত্যাকাণ্ডের আসামিরা আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘঠিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশ হতে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরোও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠায়।
ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরবর্তীতে জাহিদুল ইসলাম টিপু গ্রান্ড সুলতান রেস্তোরাঁ হতে বের হলে কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। বর্ণিত অবস্থান সম্পর্কে জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় টিপুকে গুলি করে খুন করে তাদের ভাড়াটে খুনিরা।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে দশটায় রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম টিপু। ঘটনাস্থলে একজন নিরীহ কলেজ ছাত্রী নিহত হয়। নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা রুজু করেন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা এবং বিশেষ করে একজন কলেজ ছাত্রীর নিহত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
র্যাবের ব্যাপক তদন্ত এবং গোয়েন্দাদের নজরদারিতে গ্রেফতার হন এ হত্যাকাণ্ডের শুটার। এরপর গ্রেফতার হন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক (৫২) এবং আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮), মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ।