বিশ্বে দ্রুত ধনী হওয়ার হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি : কাজী খলীকুজ্জমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৭ পিএম, ১ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৪ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, ভোজ্যতেল নিয়ে যারা কারসাজি করেছে তারা যত শক্তিশালী হোক তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। দৃশ্যমানভাবে কয়েকজনকে শাস্তি দিতে পারলেই অন্যরা বাজার সিন্ডিকেটসহ অন্যান্য অনিয়ম করতে ভয় পাবে। কিছু অতিলোভী অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি করছে।
আজ শুক্রবার সকালে এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা দায়ী করেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সুশাসনের অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা এর জন্য দায়ী। বিশ্বে দ্রুত ধনী হওয়ার হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। অথচ ধনীলোকদের মধ্যে কর প্রদানের প্রবণতা কম, ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। দেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বাড়লেও সরকারের নীতি নির্ধারকরা এটি স্বীকার করছেন না। যে কোন সমস্যা অস্বীকার করলে তার সমাধান সহজ হয় না।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আরো বলেন, আসন্ন রমজানে পুণ্য অর্জনের জন্য দ্রব্যমূল্য কমে আসার কথা। কিন্তু উল্টো কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৌশলের মাধ্যমে রমজানের আগেই বেশি দামে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। দেশে সম্পদের অভাব নাই। রয়েছে সম্পদের সুষ্ঠু ও ন্যায্য বণ্টনের অভাব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। কিরণ বলেন, টাল মাটাল বিশ্ববাজার। যুদ্ধের প্রভাবে পণ্য বাজার উত্তাল। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। বাজারের উত্তাপ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে ভিড় জমাচ্ছে। ট্রাকের পেছনে এই ধরনের দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে দুর্ভিক্ষের কোন সিনেমার শুটিং হচ্ছে। দেশের জিডিপি বাড়লেও এর সুফল সর্বস্থরের মানুষ পাচ্ছে না। ধনীরা ক্রমাগত ধনী হচ্ছে, গরিবরা ক্রমাগত আরো গরিব হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে অসন্তোষ, আর্তনাদ, ক্ষোভ, সাধারণ মানুষের নিরব কান্না দেখা যাচ্ছে। কি কারণে দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে? এর জন্য কি অসাধু ব্যবসায়ীরাই দায়ী নাকি বিশ্ববাজার পরিস্থিতি বা সরকারের ভুল নীতি দায়ী - তাই নিয়ে হচ্ছে আজকের এই ছায়া সংসদ।
তিনি যোগ করেন, আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থা ভোক্তা বান্ধব নয়। দেশে ধান উৎপাদন ভালো হলেও চালের দাম কমছে না। মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে। আয় বৈষম্য কমিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তৈরি করতে না পারলে বাজারে পণ্য থাকলেও মানুষ তা কিনতে পারবে না। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কমপক্ষে ২ কোটি পরিবারকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা উচিত।
এর আগে দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। এতে বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ড. এস এম মোর্শেদ, কৃষিবিদ ফালগুনী মজুমদার ও সাংবাদিক রিয়াদ হোসেন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।