কমিশনের প্রতি আস্থা ফেরাতে সুবিধাভোগী কাউকে নেবেন না : আসিফ নজরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৯ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:২৩ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আমন্ত্রণ জানানোয় সার্চ কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা বর্তমানে খুবই ক্রাইসিস মোমেন্টে আছে। নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনার বড় একটি দায়িত্ব রয়েছে নতুন কমিশনের। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যেন সত্যিকারের জণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার আগামী দিনে কায়েম হয় এই লক্ষ্যে যেন অনুসন্ধান কমিটি ভূমিকা রাখে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, সকলেই কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সার্চ কমিটি সকলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। আমরা প্রস্তাব করেছি, যারা নির্বাচন কমিশনার হবেন তারা যেন আগের সরকারের আমলের সুবিধাভোগী না হন। যেমন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, এক্সটেনশন নেয়ার মাধ্যমে, সুপারসিট করার মাধ্যমে অনেকেই সুবিধা নিয়েছেন।
কোন কোন সরকার তার বিশ্বস্ত লোকদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে, এ ধরণের লোকজন যেন নির্বাচন কমিশনে না আসে। অবসর গ্রহণের পর যেসব আমলা বা বিচারক সরাসরি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারা যেন কমিশনে না আসে। যাদের সঙ্গে সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক ছিল বা আছে তারা যেন না আসে।
সার্চ কমিটিকে আমরা বলেছি, যারা এই নির্বাচন কমিশনে আসবেন তাদের যেন অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন করার মানসিকতা থাকে, ব্যক্তিত্ব থাকে। আমরা প্রস্তাব করেছি, যে সকল নাম প্রস্তাব আকারে আসছে তা যেন জনসমুখে প্রকাশ করা হয়। দেখা গেল যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন বা কোন একটি টকশো তে অংশ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেছেন। প্রস্তাবিত নামগুলো জনসমুখে প্রকাশ করলে জনগণ যেন তাদের কথা জানাত পারে এবং যাদের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাদের যেন তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।
সার্চ কমিটি মন দিয়ে আমাদের সকল কথা শুনেছেন। কিন্তু কতটুকু রাখবে তা নাম প্রকাশ হওয়ার পর বুঝতে পারব। বৈঠকে উপস্থিত কেউ কোন নাম প্রস্তাব করেনি। আমরা কথা বলেছি, কিসের ভিত্তিতে নেয়া উচিত এবং কিসের ভিত্তিতে নেয়া উচিত নয় তা নিয়ে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আস্থা বা অনাস্থার নয়, আগের কমিটিগুলো কি করেছিল তা আপনারা দেখেছেন। এখানে শতভাগ আস্থা রাখার জায়গা নেই। তাছাড়া আপনারা জানেন অনুসন্ধান কমিটির গঠন নিয়েও কিছু সমালোচনা ছিল। কাজেই এখানে একশতভাগ আস্থা রাখার জায়গা নেই। কথায় আছে, বৃক্ষ কি তা ফলে পরিচয়। কাজেই, কি কমিটি গঠিত হয়, কোন দশজনের নাম প্রস্তাব করে অনুসন্ধান কমিটি তা দেখার বিষয়।
আসিফ নজরুল বলেন, আগের গঠিত কমিটি বা কমিশন গুলোকে দেয়া কোন প্রস্তাব বা পরামর্শই রাখা হয়নি। আমি আশাবাদী বা হতাশাবাদী না বলে বলব, অতীত ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রাখেন, বর্তমানের দিকে লক্ষ্য রাখেন অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আপনারও জেনে যাবেন, কি হচ্ছে?
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কেবল আসা-যাওয়ার মধ্যে সীমাবব্ধ রাখতে চাই না। আমাদের হতাশ, সংক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা এসেছি কারণ বাইরে থেকে কথা বললে, আপনারাই বলবেন কেন এখানে এসে কথা বললাম না। আমরা এসেছি আমাদের অভিমত যেন সত্যিকার অর্থে বিবেচনায় নেয়া হয়।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা যেন একটি শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পাই। আশা রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই। কমিশনে কারা যাবে আমি সেটা বলব না, আমলারা ভাল নির্বাচন করেছে আবার খারাপ নির্বাচনও করেছে। বিচারকের অধীনে ভাল নির্বাচন হয়েছে আবার খারাপ নির্বাচনও হয়েছে। সাফ কথা হচ্ছে, যারা বিভিন্ন সরকারের অনুগত, সুবিধাপ্রাপ্ত তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না।