প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৮ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৩ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
পিলখানায় বিডিআর সদরদফতরে (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যাকাণ্ডের মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও সল্পমেয়াদী সাজা ভোগ শেষ হওয়া বিডিআর সদস্যদের জামিন দিতে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ চেয়েছে পরিবারগুলো।
আজ রবিবার পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতস্থ ঢাকা জজ কোর্ট ভবনে অবস্থিত মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যরা এ দাবী জানান তারা।
হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য সুবেদার মো. আব্দুর রশিদের ছেলে মো. সাকিব আহমেদ বিডিআর সদস্যদের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০০৯ সালে ২৪ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ৩টি মামলা দায়ের হয়। যথাক্রমে (ক) বিডিআর আইনে বিভাগীয় মামলা (খ) হত্যা মামলা (গ) বিস্ফোরক মামলা। বিভাগীয় মামলা শেষ হয় ২০১১ইং সালের মধ্যে। এরপর হত্যা মামলাটি ৬৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে মাত্র ২ বছর ১১ মাসের মধ্যে সকল আইনি কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন। উক্ত মামলা উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর।
যা বর্তমানে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে বিচারাধীন। অথচ একই সাথে হত্যা ও বিস্ফোরক দুটি মামলা গেজেট হওয়া সত্ত্বেও বিস্ফোরক মামলাটি কোন এক অদৃশ্য কারণে আলাদা করা হয় যা এখন নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। বিস্ফোরক মামলাটি প্রাথমিক অবস্থায় মাত্র ২০১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিমাসে দুই দিন ধার্য থাকলেও নামমাত্র এক ঘন্টা কোর্ট চলে।
তিনি আরও বলেন ঘটনার প্রায় ১৩ বছর পূর্ণ হতে চলেছে অথচ অদ্যবদি বিচার কার্য শেষ হচ্ছে না বা শেষ হবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ বিচারিক আদালত থেকে হত্যা মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাওয়া ২৭৮ জন এবং স্বল্প মেয়াদী সাজাভোগ শেষে খালাস পাওয়া ১৯০ জনসহ সর্বমোট ৪৬৮ জন বিডিআর সদস্য মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। কিন্তু বিস্ফোরক মামলার কারণে তারা মুক্তি পাচ্ছে না এমনকি মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না এবং জামিন ও দেওয়া হচ্ছে না।
তাই আমরা অসহায় পরিবারগুলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ ভিকটিম পরিবার বিচার প্রত্যাশা করে, তেমনি আমরা আসামির পরিবারগুলি ন্যায়বিচার নিশ্চিত প্রত্যাশা করি।
তিনি আরও বলেন, একজন বন্দীর সকল আইনি সুযোগ-সুবিধাসহ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব কিন্তু আমরা সকল আইনি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিস্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৩ বছরেও আমাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। বিস্ফোরক মামলায় বারবার নিম্ন আদালতে জামিন চাইলে জামিন নামঞ্জুর হচ্ছে। আবার জামিন নামঞ্জুরের সার্টিফাইড কপিও সরবরাহ করা হচ্ছে না। যার কারণে উচ্চ আদালতেও জামিন আবেদন করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এসকল এক-একজন বিডিআর এক একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। অথচ একটি ঘটনায় সেই ব্যক্তিটি কারাগারে অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে পরিবারগুলো করুণ অসহায় অবস্থায় দীর্ঘ বছরকাল ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনিভাবে শত শত পরিবার একদিকে নির্মম নিঃসহায় দিনযাপন করছে অন্যদিকে কারাগারে আটক প্রিয় স্বজনদের খরচদি, আইনজীবীদের খরচ, পরিবার পরিচালনা করা অতিশয় কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।
অথচ বিষয়টি কোন মহলের নজরে আসছে না। অন্যদিকে উচ্চ আদালত কর্তৃক ২০১৭ সালে হত্যা মামলায় আপিল নিষ্পত্তি বা রায় হয় কিন্তু ৪ বছরের বেশি সময় পার হলেও অদ্যবদি রায়ের কোন কাগজ পত্র কারাগারে পৌঁছায়নি। বর্তমান অন্তরীণ বিডিআরদের অনেক বয়স্কের কারণে চলাচলে অক্ষম হয়ে নিদারুণ কষ্টে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করছে।
ইতিমধ্যে নানা রোগে শোকে কারাগারে ৪২ জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। যাদের মধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ১২ জন রয়েছেন। এ দেশের কৃতি সন্তান বীর প্রতীক ও বীর মুক্তিযােদ্ধারা খালাস পেয়েও তাদের মুক্তি মিলছে না। তাই বিস্ফোরক আইনের মামলা দ্রুত নিষ্পিত্তি বা জামিন প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।