ঢাকায় একটি কবর সংরক্ষণে খরচ ২০ লাখ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৫ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার কবরস্থানগুলোতে ২৫ বছরের জন্য ২৮ বর্গফুট আকারের কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে গুনতে হবে মোট ২০ লাখ টাকা। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কবরস্থানগুলোতে খরচ কিছুটা কম। ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে গুনতে হবে ১১ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
কবরের সাড়ে ৩ হাত জমির মূল্য এত বেশি কেন?
২ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাই বলছেন, রাজধানীর ঢাকার বাইরে কবর দেয়ার প্রবণতা বাড়াতে উচ্চমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সবাই চান তাদের প্রিয়জনকে ঢাকায় কবর দিতে। যদি তেমন হয়, তাহলে কবরস্থানগুলোতে জমির অভাব দেখা দেবে।
জুরাইন, আজিমপুর ও খিলগাঁওয়ের ৩টি কবরস্থানে কোনো কবর ১০, ১৫, ২০ এবং ২৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে যথাক্রমে ৫ লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ এবং ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
বনানী, রায়েরবাজার, মিরপুর এবং উত্তরায় ৩টি কবরস্থানে সংরক্ষণ ব্যয় নির্ধারণ করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। ১৫ বছর সংরক্ষণের জন্য ৬ লাখ টাকা এবং ২৫ বছরের জন্য ১১ লাখ টাকা দিতে হবে। তবে বনানী কবরস্থানে ২৫ বছর কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে ১৫ লাখ টাকা এবং ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন বলেন, ‘কবরস্থানের সাধারণ অংশে কোনো কবরের জমি লিজ নিতে চাইলে এর ৩ গুণ বেশি মূল্য দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, কারো মৃত্যুর আগে কবর সংরক্ষণের সুযোগ নেই। কেউ যদি লিজ নিতে চায়, তাদের প্রিয়জনকে কবর দেয়ার পর আবেদন করতে হবে।
অতীতে কবরের জন্য আগাম লিজ নেয়া যেত, তবে নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী সেই নিয়মটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান এনায়েত।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের কবরস্থানের জন্য একটি নতুন নির্দেশিকা তৈরি করেছে, সেখানে সাধারণ দাফনের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে উত্তর সিটি করপোরেশন ৫০০ টাকা নেয়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র মো. আবু নাসের জানান, বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তারা ১ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘শহরের কবরস্থানে প্রিয়জনকে দাফন করা থেকে বাসিন্দাদের নিরুৎসাহিত করতে ১ হাজার টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে তারা ঢাকার পরিবর্তে গ্রামের বাড়িতে দাফন করেন।’
উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থানগুলোর মধ্যে রায়েরবাজার কবরস্থান প্রায় ৯৬ একর জমিতে স্থাপিত। তবে এই কবরস্থানে কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেয়া হয় না। কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা কোনো রিজার্ভেশন দিই না। আমরা সম্প্রতি এটি বাতিল করেছি। এখানে বিস্তীর্ণ জায়গা থাকায় এমনিতেই প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর পরে একটি কবরের ওপর আরেকটি কবর দেওয়া হয়।’
গত ৫ বছরে মাত্র ৭টি কবরের লিজ আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মিরপুরের কালশীতে একটি বড় ব্যক্তিগত কবরস্থান রয়েছে। সেখানেও কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া কবরের জমি লিজ দেয়া হয় না।
কালশী কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক মো. রিপন জানান, জমির স্বল্পতার কারণে কবর লিজ দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে বিশেষ কিছু অনুরোধে লিজ দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব ক্ষেত্রে ২০ বছরের লিজ বাবদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়ে থাকি।’
তবে কবরস্থানের ইজারাদাররা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।
মিরপুর-১২ এর বাসিন্দা মো. লুৎফুল কবির শিপন জানান, নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার আগে তার বাবা মারা যান। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল তারা ৭০ হাজার টাকায় দুটি কবরের জমি লিজ নিয়েছিলেন।
‘একটিতে আমার বাবাকে এবং অন্যটিতে মা মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর মাকে দাফন করেছি। কিন্তু মায়ের দাফনের সময় কবরস্থান কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত কবরের দামের বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। অথচ কবর দুটি লিজ নেয়ার সময় আমাদের বলা হয়েছিল যতদিন ইচ্ছা কবরগুলো সংরক্ষিত রাখা যাবে,’ বলেন তিনি।