ভাড়াটে মানুষ দিয়ে টিসিবির পণ্য ক্রয়, বেশি দামে দোকানে বিক্রি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮ পিএম, ১৫ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করচে। তবে অধিকাংশ স্পটে প্রকৃত নিম্নআয়ের মানুষ পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাজারমূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মশুরের ডাল কেনার জন্য বিভিন্ন স্পটে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে প্রতিদিন পণ্য কিনতে লাইনে ‘ভাড়াটে’ লোক দাঁড় করিয়ে পণ্য সংগ্রহ করে নিচ্ছে একটি চক্র। পরে এসব পণ্য বেশি দামে (বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে) পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৬০ টাকায়, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকায় এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। এসব বিষয় নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের সামনে উপস্থিত ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়। অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, টিসিবির পণ্য কিনতে প্রতিদিন ঘুরেফিরে কিছুসংখ্যক পরিচিত মুখের দেখা মেলে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তারা সকাল থেকেই বিভিন্ন স্পটের সামনে বসে থাকেন কিংবা রাস্তায় ইট বসিয়ে রেখে জায়গা দখল করে রাখেন। টিসিবির ট্রাক এলে তারাই প্রথমে পণ্য পান। আবার ঘুরেফিরে তাদের লোকজনদেরকেই একাধিকবার পণ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায়। একাধিকবার পণ্য কেনা নিয়ে বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিনই বিশেষ করে নীরদের মধ্যে তর্কবিতর্ক, বাদানুবাদ, গালাগালি এমনকি হাতাহাতির মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ রয়েছে, যারা একাধিকবার পণ্য কেনেন তাদের পক্ষ নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়দানকারী ওয়ার্ডের কিছু উঠতি নেতাকর্মী। নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারমূল্যের চেয়ে টিসিবির পণ্য অপেক্ষাকৃত কম দাম হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রের সদস্যরা দরিদ্র নারী ও শিশুদের লাইনে দাঁড় করিয়ে পণ্য কিনে পরে দোকানে বিক্রি করে দেন। তাদের কাছে টিসিবির বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেটের অদূরে আজিমপুর কবরস্থানের সামনে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে বেশ কিছুসংখ্যক নারীকে হাতে টাকা নিয়ে পণ্য কেনার জন্য হইচই করতে দেখা যায়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকটিকে দ্রুতবেগে স্থান ত্যাগ করতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, তিনি সপ্তাহে দুদিন টিসিবির পণ্য কিনতে আসেন। যখনই আসেন তখনই কিছু পরিচিত নারী ও শিশুর মুখ দেখতে পান। তারা লাইনে পণ্য কিনে আবার পেছনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি সরকারের খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। কিন্তু মনিটরিং না থাকা এবং সংঘবদ্ধ একটি চক্র গড়ে ওঠায় প্রকৃতপক্ষেই যাদের টিসিবির পণ্য দরকার, তারা পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড বা অন্য কোনোভাবে নাম লিখিয়ে পণ্য বিক্রি করলে সংঘবদ্ধ চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।