নথি গায়েব-প্লট আত্মসাতের চেষ্টা : গোল্ডেন মনিরসহ ৯ জনের নামে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮ পিএম, ৪ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪৪ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নথি সৃজন ও লিজের দলিল তৈরি করে বাড্ডা ডিআইটি প্রকল্পের প্লট আত্মসাতের চেষ্টা ও সরকারি নথি গায়েবের অভিযোগে গোল্ডেন মনিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. শফিউল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আদনান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- রাজউকের উপ-পরিচালক মো. দিদারুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন শরীফ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আনোয়ার হোসেন, ঊর্ধ্বতন হিসাব সহকারী এস এম তৌহিদুল ইসলাম, কার্য-তদারককারী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন সরকার ও রাজউকের অফিস সহায়ক মো. পারভেজ চৌধুরী, অটো কার সিলেকশনের মালিক মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির এবং জমির দালাল সিরাজগঞ্জের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও নারায়ণগঞ্জের মো. নাসির উদ্দিন খান।
আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকর্তার সিল অবৈধভাবে তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে বেআইনিভবে ভুয়া নথি সৃজন ও লিজ দলিল সম্পাদন করে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করার অপরাধে দ-বিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৯/৫১১/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অফিস থেকে নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন নথি মুভমেন্ট রেজিস্টারে অ্যান্ট্রি করেননি। বিভিন্ন রেকর্ডপত্র অফিসে জমা না দিয়ে কৌশলে সরিয়েছেন ও বিভিন্ন কর্মকর্তার সিল অবৈধভাবে তৈরি করে ভুয়া নথি তৈরি করেছেন। লিজ দলিল সম্পাদন করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন।
২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে রাজউক অ্যানেক্স ভবনের পঞ্চম তলার এ-৫১৪ নম্বর কক্ষে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৭০টি প্লটের নথি, একটি ল্যাপটপ, রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তার ১৫টি সিলসহ স্ট্যাম্প প্যাড, ১৭০টি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র, ডিমান্ড কালেকশন রেজিস্ট্রার (ডিসিআর) বই একটি ও চারটি লিজ ডিডের কপিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। মতিঝিল থানার এসআই সফিকুল ইসলাম উদ্ধার করা আলামত জব্দ করেন।
দুদক জানায়, তল্লাশিকালে জব্দ করা রাজউকের মূল্যবান নথিপত্রের সঙ্গে মনির হোসেনের কর্মচারী হিসেবে পরিচিত মো. নাসির ও রাজউকের পিয়ন মো. পারভেজ চৌধুরীকে কর্মরত দেখা যায়। তবে একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে নাসির পালিয়ে যায়। রাজউকের পিয়ন পারভেজ চৌধুরীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, রাজউক অ্যানেক্স ভবনের পঞ্চম তলার এ-৫১৪ নম্বর কক্ষটি ১৯৮৬ সাল থেকে পলি ওভারসিজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হককে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেয়া হয়েছিল। পরিদর্শনকালে রাজউকের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ফজলুল হক ওই কক্ষের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা মনির হোসেনকে (গোল্ডেন মনির) সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। আটক হওয়া পারভেজ চৌধুরীও জানিয়েছে, ফাইলগুলো গোল্ডেন মনিরের নির্দেশে রেকর্ডরুম ও সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে সংগ্রহ করে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওই কক্ষে নেওয়া হয়েছিল।
আটকের পর পারভেজ চৌধুরী সেসময় জানান, গোল্ডেন মনিরের নির্দেশে তিনিসহ জিন্নাহ ও নাসিরসহ আরও কয়েকজন মিলে ৭০টি নথি কৌশলে রাজউকের মূলভবন থেকে অ্যানেক্স ভবনের এ-৫১৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিন্তু রাজউকের ফাইল সংশ্লিষ্ট শাখা এবং রেকর্ডরুম ছাড়া অন্য কোথাও থাকার কথা নয়।
তিনি আরও জানান, নথিগুলো যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষটি রাজউকের অফিস কক্ষ নয়। পরে রাজউক চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে রাজউকের দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে পারভেজ চৌধুরী, মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির, জিন্নাহ ও নাসিরের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মামলটি পরে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।
২০২০ সালের ২০ নভেম্বর মেরুল বাড্ডার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে গোল্ডেন মনিরকে মাদক ও অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মতিঝিল ও রমনা থানায় মাদকদ্রব্য ও দুদক আইনে আরও চারটি মামলা রয়েছে। মনির হোসেন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
২০২০ সালের অক্টোবরে মনিরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। সেই অভিযোগ যাচাই করে অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয় সংস্থাটি। অনুসন্ধানে মনিরের নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পায় দুদক।