অবৈধ রিকশা ধরছে ডিএসসিসি, জানেন না চালকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ২ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
অবৈধ ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকার আড়ংয়ের গলিতে পরিচালিত অভিযানে ডিএসসিসি কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন না থাকায় অন্তত ১৫টি রিকশা জব্দ করা হয়েছে।
তবে রিকশার রেজিস্ট্রেশন থাকা-না থাকার বিষয়ে অবগত নয় বেশিরভাগ চালকই। তারা বলছেন, মালিকের কাছ থেকে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় রিকশা চালান তারা। রেজিস্ট্রেশন থাকা-না থাকার বিষয়টি মালিক বলতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ শিকদার চলাচলরত রিকশা থামিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। রিকশার পেছনে রেজিস্ট্রেশন লাগানোর কথা থাকলেও তা না পেয়ে রিকশা জব্দের নির্দেশ দিচ্ছেন।
জব্দ করা এক রিকশার চালক শাহীন বলেন, আমরা গরিব মানুষ রিকশা চালিয়ে খাই। দৈনিক ২০০ টাকা জমায় গ্যারেজ থেইকা রিকশা নিয়া চালাই। লাইসন্সের বিষয় আমরাতো জানি না। প্যাসেঞ্জার নিয়া আইছি আর রিকশা আটকে দিছে, এহন আমরা কী করমু?
বাচ্চু মিয়া নামে আরেক জব্দ করা রিকশাচালক জানান, তারা রিকশার ১০ জানুয়ারির মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে বলে শুনেছেন। অভিযানের আগে কোনো ধরনের নোটিশ দেয়া হয়নি, কিন্তু এখন রিকশা আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। রিকশা রেজিস্ট্রেশন না করার জন্য তারা মালিকের সঙ্গে কথা বলুক, অথচ চালকের কাছ থেকে রিকশা নিয়ে নেয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। এখন মালিক যদি চালককে রিকশা ফেরতের জন্য চাপ দেয় তারা কী করবেন?
৩-৪ দিন আগে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে টাকা তুলে রিকশা কিনেছেন খুলনার রমজান। অভিযানে রিকশা আটকে দেয়ায় তিনি কান্না শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, ৭ হাজার টাকা কিস্তি নিয়া ৩-৪ দিন আগে রিকশাটা কিনি। প্রত্যেকদিন ২০০ টাকা কিস্তি দেয়া লাগে, রিকশাটা নিয়ে গেলে আমার না খেয়ে মরতে হইবো। ’
প্রায় ৩ বছর ধরে অন্যের রিকশা ভাড়ায় চালাতেন রমজান। ৩-৪ দিন আগে রিকশাটা পরিচিত একজনের কাছ থেকে কেনেন। দুই বছরের শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস করছেন। সন্তান ছোট হওয়ায় স্ত্রী কিছু করতে পারেন না, রিকশা চালিয়েই তার সংসার চলে।
এসব বলতে বলতে রমজান কেঁদেই যাচ্ছিলেন, পরে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে নেয়ার শর্তে রাজি হওয়ায় তার রিকশাটি ছেড়ে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ শিকদার বলেন, আমাদের অভিযান শুধুমাত্র ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধেই না, সব অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে। লাইসেন্সবিহীন রিকশার বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এটা ধারাবাহিক অভিযান, আজ শুরু হলো। এটা চলতে থাকবে।
ধানমন্ডির মতো প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে না, এগুলো ভেতরের দিকে চলে। তাহলে এখানে অভিযান চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মাত্র শুরু করেছি, বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালানো হবে। পর্যায়ক্রমে মেয়রের নির্দেশনার আলোকে দক্ষিণ সিটির সব জায়গায় অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। নিয়ম মেনেই রিকশা চালতে পারবে।
এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, আগামী বছর থেকে অবৈধ রিকশা, অনুমোদনহীন রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর নগর ভবনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের একাদশতম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত জানান তিনি।