মহাসাগরে ঝড়ের কবলে মিথিলা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:২৯ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান তিনি। আর অফিসের কাজে প্রায়ই তাকে ঘুরে বেড়াতে হয় বিশ্বের নানা দেশে। সম্প্রতি উগান্ডায় গিয়েছিলেন মিথিলা। সেখানের কাজ শেষ করে কলকাতায় ফেরার পথে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন এই অভিনেত্রী।
আটলান্টিক মহাসাগরে ঝড়ের কবলে পড়েন মিথিলা। দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। দৈনিক দিনকাল অনলাইন’র পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল।
শুরুতে মিথিলা লিখেছেন, ‘আমি সাধারণত অফিসিয়াল ট্রিপ থেকে সুন্দর ছবিগুলোই শেয়ার করি। আর তাই দেখে অনেকেই আহা-উহু করতে করতে বলেন, “ইশশ আমারও যদি এরকম একটা জব থাকতো। আপনি কত ঘুরে বেড়ান...আহা।” এই সুন্দর ছবির পেছনের অভিজ্ঞতাটা তাদের জন্য শেয়ার করছি। গত দুই সপ্তাহ আমি উগান্ডায় বিভিন্ন রকম ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট শেষ করে ওয়েস্ট আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে আসি, সেখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটা আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করতে। আমার কর্মশালা ৯ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। ১০ সেপ্টেম্বর রাতেই আমার সিয়েরা লিওন থেকে কলকাতায় যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আয়রাকে যেহেতু বাড়িতে রেখে এসেছি, কাজের বাইরে আর একদিনও আমার থাকতে ইচ্ছা করে না।’
১০ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এদিন বিকালবেলা থেকেই প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী, ফ্রি টাউন, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। সিয়েরা লিওনের এয়ারপোর্ট ফ্রি টাউন থেকে দূরে- একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় অবস্থিত, যার নাম লুংগি। ফ্রি টাউন থেকে ১ ঘণ্টা একটা ছোট ফেরিতে আটলান্টিক পার হয়ে লুংগি এয়ারপোর্টে যেতে হয়। ঝড়-বৃষ্টির কারণে আমি একটু বেশিই চিন্তিত ছিলাম। কারণ আমার সমুদ্র যেমন ভালো লাগে, তেমনি উত্তাল সমুদ্র ভয়ও লাগে৷ আমার ফেরি, যেটাকে ‘সি কোচ’ বলা হয়, সেটার টাইম ছিল রাত ২টায়। আমি সন্ধ্যা থেকে আশায় ছিলাম যে, আবহাওয়া রাতে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু যত রাত বাড়ছে ততই ঝড়ও প্রকট আকার ধারণ করছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে রাত ১টায় সি কোচে টার্মিনালে গেলাম। লোকজন খুবই কম। আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে, সিয়েরা লিওন থেকে মরক্কোর কাসাব্লাংকায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় ফেরার কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ২টায় যখন সি কোচে ওঠে বসলাম, তখন বোট ভিষণভাবে দুলছিল। তারপর মাঝ সমুদ্রে যাওয়ার পর দুলুনির সঙ্গে সঙ্গে মাথাটাও ঘুরতে শুরু করল। বিশাল বিশাল পানির ঝাপ্টা আসছিল। মনে মনে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তে পড়তে ঘড়িতে সময় যেন এগোচ্ছিলই না! শেষ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা এক জীবন ভাবার আগ মুহুর্তে ফেরি ওপাড়ে পৌঁছায়। ফেরি থেকে নেমে টার্মিনাল পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে যেতে যেতেই কাকভেজা হয়ে গেলাম। তারপর একটা বাসে চড়ে লুংগি এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে বাজলো ভোর ৪টা। তারপর ইমিগ্রেশনের বহু কসরত শেষ করে প্লেনে উঠতে গিয়ে আরেকটু ভিজলাম। কারণ বাসে করে রানওয়ের কাছাকাছি গিয়ে প্লেনে ওঠার সময় অবশ্যই কোনো ছাতার ব্যবস্থা ছিল না। যাক ওই ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রে ডুবে না গিয়ে প্লেন পর্যন্ত যে যেতে পেরেছিলাম, সেটাই চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য মনে হচ্ছিল! আমার ফ্লাইট ছিল এয়ার মারোক, যেটা লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়া হয়ে কাসাব্লাংকা যাবে।
এই বিষয়টা আফ্রিকায় খুব কমন যে, একটা প্লেন লোকাল বাসের মতো মাঝখানে দু-একটা জায়গায় থেমে যাত্রী তুলবে আর নামাবে। এই সময়ে বাকি যাত্রীদের কিন্তু প্লেন থেকে নামতে হবে না। প্লেনেই বসে থাকবে। তো মনরোভিয়াতে ঘণ্টা খানেক থামাসহ সব মিলিয়ে ৮ ঘণ্টার মতো জার্নি করে দুপুর ২টায় কাসাব্লাংকায় পৌঁছানোর পর আরেক বিপদ হলো। আমার কাসাব্লাংকা থেকে দুবাইয়ের ফ্লাইটটা মিস করলাম।’
এমন পরিস্থিতিতে অফিসে যোগাযোগ করেন মিথিলা। তা জানিয়ে বলেন, ‘এবার পরের ফ্লাইট আছে পরের দিন আর এদিকে কাসাব্লাংকায় এয়ারপোর্টে কোনো হোটেল নেই, আর বাইরে ভিসা ছাড়া বের হওয়া যাবে না (অন অ্যারাইভাল ভিসা বাংলাদেশিরা পাবে না)। পরে আমি আমার অফিসে যোগাযোগ করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বুক করালাম যেটা বিকেলে ছাড়বে কিন্তু ঢাকায় যাবে। শেষ পর্যন্ত টার্কিশে চড়ে রাত ১টায় ইস্তাম্বুল পৌঁছানোর পর দেখলাম আমার ইস্তাম্বুল থেকে ঢাকায় যাওয়ার ফ্লাইটটাও সাড়ে ৫ ঘণ্টা ডিলেইড! ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে ঘুম চোখে এই লেখাটি লিখেছি।’