পবিত্র ঈদুল আজহা কাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩২ এএম, ৯ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:০৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আগামীকাল রবিবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবে।
মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন। স্বার্থপরতা পরিহার করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা কোরবানির মহান শিক্ষা। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। তারা চিরবিদায় নেয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এবার ঈদের ছুটি ৩ দিন ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদ উপলক্ষে আজ ৯ জুলাই, ১০ জুলাই শনিবার ঈদের দিন এবং ১১ জুলাই ছুটি থাকবে। জামাতে আসা মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মুসল্লিরা মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করতে পারবেন না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি ঈদ জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।
সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কোরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপি মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় বুধবার দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দু:স্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাণী:
‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, কোরবানি হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। স্বার্থপরতা পরিহার করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা কোরবানির মহান শিক্ষা। মানবিক মূল্যবোধে উদ্ভাসিত ঈদুল আজহা হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধকে পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদিত হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কোরবানীর যে মূল শিক্ষা তা ব্যক্তি জীবনে প্রতিফলিত করে মানব কল্যাণে ব্রতী হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ সম্ভব। বিশ্বাসী হিসেবে সে চেষ্টায় নিমগ্ন থাকা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ঈদুল আজহা বিশ্ববাসী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দু’টি ধর্মীয় উৎসবের একটি। উৎসব সকল ভেদরেখা অতিক্রম করে মানুষকে পারস্পরিক শুভেচ্ছাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধন। সকল দ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসার বিষকে দূরীভূত করে সম্প্রীতির এক স্বর্গীয় অনুভূতি মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে। কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে বিশ্বমানবগোষ্ঠীর জীবন এখনও বিপর্যস্ত। মানুষের দিন অতিবাহিত হচ্ছে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে। বাংলাদেশও সেই করোনার প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ভয়াল দুর্দিন উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দেয়। দেশের বর্তমান অবস্থায় সকলের পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা কঠিন হবে। একদিকে গণতন্ত্রহীনতায় এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিনযাপন করছে দেশবাসী, মত প্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরে বিরোধী শক্তির ওপর চলছে হামলা-মামলা-গুম-গ্রেফতারের মতো নির্দয় নিপীড়ন।
অন্যদিকে করোনার ব্যাপক সংক্রমণের কষাঘাতে উদ্বেগ বাড়ছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দরিদ্র, কম আয় ও কর্মহীন মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ নিষ্পিষ্ট হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের চরম বৃদ্ধির কষাঘাতে। এর ওপর শুরু হয়েছে প্রবল বন্যা। মানুষের বসত ঘর ও সহায়-সম্পদ সব ভেসে গেছে। বানভাসী মানুষের হাহাকার এখন সর্বত্র শোনা যাচ্ছে। এই ঈদে দলের সকলে যেন বন্যা উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সকল শক্তি নিয়োগ করে, আমি সেই অনুরোধ করছি। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে বন্যা ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করার জন্য আহবান জানান। ঈদের আনন্দের দিনে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে- সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সবাইকে একসাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে হবে।
ঈদুল আজহা সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি, সমাজে সৃষ্টি হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন, মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে এই প্রার্থনা জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী:
“পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাই। তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করি। কোরবানি মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মহৎ ইবাদত। মানবতার সেবায় মুসলমানদেরকে তাদের সময়, প্রচেষ্টা এবং সম্পদ নিয়ে এগিয়ে আসতে সাহায্য করে। ‘কোরবানির পশুকে আল্লাহ তাঁর মহিমার প্রতীক করেছেন’। কোরবানীর সে শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে মানব কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
দেশ এখন এক চরম দুঃসময় অতিবাহিত করছে। করোনার পাশাপাশি চলমান প্রবল বন্যা মোকাবিলায় সরকারের চরম ব্যর্থতায় সারাদেশের মানুষ বিপর্যস্ত, অসুস্থতা ও ক্ষুধার জ্বালায় হাহাকার করছে অসহায় মানুষ। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। মানুষের দিন কাটছে জীবন-মৃত্যুর অজানা আশঙ্কায়। এর ওপর স্বেচ্ছাচারী শাসনের কবলে জনগণ অধিকারহীন ও বাকরুদ্ধ। অগণতান্ত্রিক শক্তির দানবীয় উত্থানে রাষ্ট্র ও সমাজে ভয় ও আতঙ্ক আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অনির্বাচিত ভ্রুক্ষেপহীন সরকারদের জনগণের জন্য কোন দায়িত্ববোধ থাকে না। জনগণকে উপেক্ষা করাই যেন তাদের একমাত্র কর্মসূচি।
সরকারের অপরিণামদর্শিতা এবং উদাসীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় লাখ লাখ বানভাসি মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, অথচ সরকার নির্বিকার। বর্তমান সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা ধরণের প্রহসন ও নাটক প্রদর্শন করছে। আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। শ্রষ্টার প্রতি নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতি বছর পশু কোরবানি দেয়, এর মাধ্যমে মহান আল্লাহপাকের প্রতি নিবেদিত বান্দা হওয়ার প্রেরণা জোগায়।
কোরবানির ঈদ বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। যেকোন উৎসব বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য নয়, উৎসবের রয়েছে একটি সার্বজনীন বৈশিষ্ট্য। উৎসব মানবজাতির এমন এক সাগর তীর যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকলেই সামিল হতে পারে। তাই স্বার্থচিন্তা পরিহার করে মানব কল্যাণ এবং সমাজে শান্তি, ন্যায়, সুবিচার ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে। আসুন, আমরা অঙ্গীকার করি-এই ‘ত্যাগের উৎসবের’ দিনে করোনায় বিপন্ন মানুষসহ অসহায়-নিরন্ন মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার।
ঈদুল আজহা সকলের জীবনকে করে তুলুক আনন্দময়, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমি এ প্রার্থনা জানাই। ঈদ মোবারক।