আলোচিত মতিউরের সঙ্গে গভর্নরের সখ্যর গুঞ্জনের মধ্যেই ছবি ভাইরাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:১৪ পিএম, ২৯ জুন,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:২৫ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সখ্য নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ব্যাংকপাড়ায়। এরই মধ্যে দুজনের একসঙ্গে ওমরা করাসহ গভর্নরকে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি ছবিতে দুজনকে হজের এহরাম বাঁধা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। অপর ছবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর কার্যালয়ে রউফ তালুকদারকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মতিউর।
জানা গেছে, একটি ছবি ২০২৩ সালে হজের সময়ে সৌদি আরবে তোলা। অপর ছবিটি ২০২২ সালের আগস্টে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর নিয়োগের পর তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে যান মতিউর রহমান। বুধবার ছবি দুটি ভাইরাল হলেও গত কয়েকদিন ধরেই দুইজনের সখ্যর বিষয়ে ব্যাংকপাড়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে।
মতিউর রহমান ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ওই সময় অর্থসচিব ছিলেন। তার জোর সুপারিশে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হয়েছিলেন। আর মতিউরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বেনামে পুঁজিবাজারে ২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন আলোচনার মধ্যেই এই ছবি সামনে এলো।
এ বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের মাধ্যমে লিখিতভাবে গভর্নরের কাছে প্রশ্ন করা হয়। সেখানে জানতে চাওয়া হয়- তিনি অর্থসচিব থাকা অবস্থায় মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক বানাতে হস্তক্ষেপ এবং মতিউরের মাধ্যমে বেনামে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে তার মন্তব্য কী? এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এ প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানিয়েছেন এসব অভিযোগ সঠিক না।
মতিউর রহমান কিছুদিন ধরে আলোচনায় আসেন তার ছেলের কারণে। কোরবানির ঈদে সাদিক অ্যাগ্রো নামের একটি খামার থেকে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার বিষয়ে একের পর এক খবর প্রকাশিত হতে থাকে।
অভিযোগ আছে, রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুবাদে পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সুযোগ সুবিধা নিয়ে মতিউর দেশবিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যা তিনি গণমাধ্যমে স্বীকার করে একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। সেখানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা প্রকাশ করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে শুধু মেয়ের নামে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছি। এই বাজার থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বানিয়েছেন বলে নিজেই দাবি করেছেন। বুদ্ধি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে কাজে লাগিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও দাবি করেন মতিউর রহমান।
এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে গত রবিবার মতিউর রহমানকে তার বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এর পরদিন তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রথম স্ত্রী ও এক ছেলেসহ মতিউরের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আসে। ছেলের ছাগলকাণ্ডে বাবার পরিচয় নিশ্চিতের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন মতিউর। সবশেষ গুঞ্জন রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকা দিয়ে গোপনে দেশ ছেড়েছেন তিনি।
এরপর ছাগল কাণ্ডের জের ধরে গত মঙ্গলবার মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিও (বেনিফিশিয়ারি) হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইদিনে তাদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।