শাহিন-সিয়ামের খোঁজে নেপাল যাচ্ছে তদন্তকারী দল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৬ পিএম, ২৯ মে,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:১৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হত্যার শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় নেপাল যাচ্ছে তদন্তকারী দল। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে— এমপি আনার হত্যার পর প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান কলকাতা থেকে নেপালের কাঠমান্ডুতে পালিয়েন যান। সেখান থেকে কোথায় গিয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিষয়টি জানতে নেপালে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির একটি দল।
সিআইডি বলছে, আনারকে হত্যা করা ওই ফ্ল্যাটটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একজন কর্মকর্তার। তার কাছ থেকে ওই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়ায় নিয়েছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহিন। ভাড়া নেওয়ার সময় তিনি তার আমেরিকান ডকুমেন্ট জমা দিয়েছিলেন। সেখানে এমপি আনারকে হত্যার পর গা ঢাকা দেন আখতারুজ্জামান শাহিন। অনুমান করা হচ্ছে— খুনের ঘটনার পর পরই দেশ ছেড়েছেন শাহিন। প্রথমে কলকাতা থেকে নেপালে যান। তবে পরে সেখান থেকেও পালিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার অবস্থান দুবাই কিংবা আমেরিকাতে হতে পারে।
সিআইডির সূত্র জানিয়েছে, আখতারুজ্জামান নেপালে কোথায় উঠেছিলেন, সেখানে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন— এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে নেপালে যাচ্ছে সিআইডি। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে আরেক অভিযুক্ত সিয়াম নেপালে থাকতে পারেন। সেখানে এই বিষয়েও তদন্ত করা হবে।
সিআইডি ও ডিবির সমন্বিত তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে— এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে আটদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এছাড়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদের ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদালত।
বাংলাদেশে রিমান্ডে রয়েছেন— এমন আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনার তদন্তে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান হারুন অর রশিদসহ তিন সদস্যের একটি দল। তারা সেখানে ঘটনাস্থল, মরদেহ ফেলা খালসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন। সেখানে ডিবির তদন্ত দলের অনুরোধে মরদেহ খোঁজা হয় সেপটিক ট্যাংকে। এ সময় সেখান থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ কেজি মাংসের টুকরো উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সেখানে পাওয়া যায় চুল এবং হাড়। তবে উদ্ধার সে সব আলামত এমপি আনারের কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পশ্চিমবঙ্গে নেওয়া হচ্ছে আনারকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে।
এরও আগে বাংলাদেশে গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে বাংলাদেশে আসে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি দল। তারা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি ও তানভীর ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া কয়েক দফায় ঢাকা পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিকে রিমান্ডে ধৃত আসামিরা একের পর এক ‘গা হিম’ করা তথ্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র। তারা বলছে— খুন করার পরে রাজারহাটের ফ্ল্যাটে এমপির দেহ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এ সময় এমপির কাছে থাকা ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় আসামিরা। এমনকি এমপি আনারের পরনে থাকা টি-শার্ট পরেই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন— এমপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওই টাকা নিয়ে গেছেন সিয়াম হোসেন নামের অপর অভিযুক্ত। তিনি নেপালে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারেন।
জানা গেছে, মুম্বই থেকে পেশায় কসাই জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার বয়স ২৪ বছর। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৩ মে সারারাত ধরে দেহ কাটতে হয়েছিল। কাজ করার সময় তাদের মদ খেতে হয়েছিল। পরের দিন জিহাদ এমপির জামা পরেই বেরিয়ে যায়। কারণ তার জামায় রক্তের দাগ লেগে ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে— ঘটনার দিন বিকেল ৩টা নাগাদ ওই ফ্ল্যাটে যান এমপি আনার। এ সময় ফয়সাল ও শিমূল ভুঁইয়া তার সঙ্গে ছিলেন। শিলাস্তি রহমান ছিলেন বাসার ওপরের তলায়। এরপরই চলে অপারেশন।
এদিকে এমপি হত্যাকাণ্ডে প্রশ্ন উঠছে শিলাস্তির ভূমিকা নিয়ে। সূত্র বলছে, খুনের সময় কলকাতায় ছিলেন শিলাস্তি। কিন্তু তিনি ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদিও শিলাস্তি নিজেই দাবি করেছেন— হত্যার সময় তিনি ফ্ল্যাটে ছিলেন। তবে হত্যার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে— শিলাস্তির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এমপি আনারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে মডেল হতে চাওয়া ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহিনের। বছর কয়েক আগে একটি পার্টিতে শাহিনের সঙ্গে পরিচয় হয় শিলাস্তির। এরপর থেকে জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে।
শিলাস্তিকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে চাইছিলেন না তিনি। পরে স্বাক্ষর করলেও; তিনি জানিয়ে দেন, ঘটনার দিন আমি ওই ফ্ল্যাটে ছিলাম, এটা ঠিক। কিন্তু এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।