শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ১৪ মে,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:৪৭ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সবকিছু ঠিক থাকলে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ভারত এবং জুলাইয়ে চীন ও ব্রাজিল সফর করার সম্ভাবনা আছে প্রধানমন্ত্রীর। তিনটি দেশই ইতোমধ্যে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করছে।
শীর্ষ পর্যায়ের এ ধরনের সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ভিশন রচিত হয়।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক বোঝাপড়া। শীর্ষ পর্যায়ের সফরের সময়ে একে অপরকে বোঝা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কের দিকনির্দেশনাগুলো ঠিক করা হয়।’
এ ধরনের সফরে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী হবে সেটিও এ ধরনের সফরে ঠিক করা হয়।’
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ একই ধরনের মত পোষণ করে বলেন, ‘সফরের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। যখন সফর হয় তখন বুঝতে হবে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে বোঝাপড়া আছে এবং উভয়পক্ষ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায়। তা না হলে সফর হবে না।’
ভারত সফর
বাংলাদেশের জন্য ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে ভারত রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধও করেছিল। এছাড়া বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় প্রভাবিত করার সক্ষমতা আছে দেশটির।
ভারতে এখন নির্বাচন চলছে এবং আগামী ৪ জুন ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরে সরকার গঠন করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা গত সপ্তাহে ঢাকা এসে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গেছেন। এখন দুই পক্ষের জন্য সুবিধাজনক একটি তারিখ নির্ধারণের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে এ সফর হতে পারে। যদি সেটি হয় তবে ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশ অতিথি হবেন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘এটি হলে অবশ্যই তা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক হবে। এটি থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশকে কী ধরনের গুরুত্ব দেয় ভারত।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাধীনতা যুদ্ধ, সংস্কৃতি ও পারস্পরিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এর পাশাপাশি বৃহত্তর ভূ-রাজনীতিও ওই সম্পর্ককে প্রভাবিত করে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক হবে সেটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্ক কতটুকু গভীর হবে সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক কী ধরনের।’
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নিয়ে জোরালো আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ, মিডিয়াসহ অন্যরা বুঝতে চায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক তাদের জন্য কোনও ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা।’
ভারতের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে এবং সেটি গোপনীয় নয় জানিয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘দিল্লির গুরুত্ব আমরা সবসময় মনে রাখি।’
বাংলাদেশে নির্বাচন হয়ে গেছে এবং ভারতের নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হবে। নতুন সরকার গঠনের পর দুই দেশ নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে চাইবে এটি স্বাভাবিক।
চীন সফর
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে চীন। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা সহায়তা করছে। আশা করা হচ্ছে জুলাই মাসের প্রথমদিকে বেইজিং সফর হতে পারে। এটি হলে ২০১৪ সালের পর এটিই হবে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর।
এ বিষয়ে মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘চীন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কারণে। তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বা উন্নয়ন সহযোগিতা অনেক বেশি এবং সেটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি পূর্বনির্ধারিত নয়। এটি জাতীয় স্বার্থ ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা যখন কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করি তখন বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার মধ্যে কোনটি ভালো সেটি যাচাই করি। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি ভারসাম্য তৈরি হয়।
ব্রাজিল সফর
গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ বছর ব্রাজিলে শীর্ষ সম্মেলন হবে এবং এছাড়া বছরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। জুলাই মাসে নলেজ হাব বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওই এক সফরে জি-২০ অনুষ্ঠানের পরের দিন থেকে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফর হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো ব্রাজিলে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি দ্বিপক্ষীয় সফর হবে। আমরা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত আশাবাদী।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরা বলেছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন এক। দুই দেশের মধ্যে চমৎকার রাজনৈতিক বোঝাপড়া হবে বলে মনে করছি, বলেন তিনি।