দেশে এলে বিমানবন্দরেই মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২২ এএম, ৮ মে,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:৩৯ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে ১/১১ সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে বারবার গ্রেফতার করা হয়েছে। সরাসরি বন্দুকের গুলিসহ অনেক বাধা ছিল। আজ আমি সব বোমা-গ্রেনেড হামলা কাটিয়ে জনগণের সেবা করতে পারছি। আমি সাহসের সঙ্গে চলে মানুষের জন্য কাজ করছি। আমরা জনগণের শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছি।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে সংসদে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান ১/১১ সরকারের আমলে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে (২০০৭ সালের ৭ মে) সংসদে একটি অনির্ধারিত আলোচনা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক উপদেষ্টাও তাকে দেশে না ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাকে দেশের বাইরে রাখার জন্য আমরা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও উপদেষ্টারা) যা যা করা দরকার তাই করব। এমনকি কেউ কেউ আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, আমি বাংলাদেশে ফিরলে আমাকে বিমানবন্দরে হত্যা করা হবে। আমি বলেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ, আমি বাংলাদেশের মাটিতে মরব, তবে আমি আমার দেশে ফিরব।’
বোর্ডিং পাস না দেওয়ার জন্য সব এয়ারলাইনসকে বলা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমেরিকান বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে তর্ক করেছি এবং তারপর ব্রিটিশ এয়াারওয়েজে লন্ডনে আসি। সেখানে পৌঁছানোর পর, আমি যখন আবার বোর্ডে যাই, আমাকে বোর্ডে উঠতে দেওয়া হয়নি।’
সেদিন যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছিলেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এমনকি যখন আমি বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম, তখনও অনেকে আমাকে ফোন করে বলেছিল যেন দেশে না ফিরি, তারা (১/১১ সরকার) তোমাকে মেরে ফেলবে। আমি পাত্তা দেইনি।’
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় সবাইকে বিমানবন্দরে না যেতে বলা হয়েছিল। এমনকি আমার দলের ভেতর থেকেও... দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সবাইকে বলেছিলেন, যে-ই বিমানবন্দরে যাবে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তিনি শুধু সকলকে বিমানবন্দরে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বলা হয়েছিল। বিমান থেকে গাড়িতে উঠে আমি ড্রাইভারকে ফ্লাইওভার দিয়ে না যেয়ে জনতার মাঝে থাকতে বলেছিলাম।
ওইদিন হাজার হাজার মানুষ রাজপথে ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সব হুমকি উপেক্ষা করে বিমানবন্দরে জড়ো হওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। ‘তারা আমাকে শুধু স্বাগত জানায়নি, নিরাপত্তাও দিয়েছে’। যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১/১১ সরকারের সময় গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত বিশিষ্ট সংগীত শিল্পি সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সত্যি যে আমি গেরিলা কায়দায় সেখানে গিয়েছিলাম। কারণ আমি জানি আমাকে বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। সে সময় পুলিশের চোখ এড়িয়ে সোজা হাসপাতালে চলে যাই।’
সে সময় তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে দেশ কে চালাচ্ছে? তিনি বরেন, ‘এটি আমার প্রশ্ন ছিল। সেদিন খুব কড়া কথা বলেছিলাম। পরদিন সকালে পুলিশ, আর্মি আমার বাড়িতে এসে আমাকে গ্রেফতার করে।’ গ্রেফতারের পর তাকে সংসদ ভবন এলাকায় একটি স্যাঁতসেঁতে ভবনে রাখা হয়েছিল।